Monday, April 7, 2014


বাংলায় সীরাত সাহিত্যের জনক মাসিক মদীনা 

সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী : মানুষ মরণশীল, কেউ অমর নন। প্রত্যেকেরই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে না-ফেরার দেশে। যারা চলে যায় তারা কেউ ফিরে আসে না। মানুষের কর্মই জীবন। সু-মহৎ কর্মের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে মানব হৃদয়ে। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে দুনিয়ার জিন্দেগীতে মানব সন্তান যেসব মহৎ কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, তা দিয়েই তাকে মূল্যায়ন করা হয়। আমাদের সমাজের প্রথা সিদ্ধ একটি নিয়ম হল, জ্ঞানী-গুণী কোন একজন মানুষের মৃত্যুর পরে আমরা তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করি। শোক সভা ও স্মৃতি চারণের পশরা মেলি। বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে মরণোত্তর পুরস্কার দেয়া হয়। গুণীজনের মৃত্যুর পর আমরা আর যত কিছুই করি ঐ মৃত লোকটি কিন্তু শরীক হতে পারে না। অথচ তাঁর জীবদ্দশায় যদি তাকে মূল্যায়ন করা হতো তাহলে তিনি নিজেও এ থেকে আরো উৎসাহ-অনুপ্রেরণা লাভ করতেন। আরো বেশী উপকৃত হতো দেশ ও জাতি। যে দেশ ও সমাজ গুণীজনের সম্মান দিতে জানে না, সে সমাজে গুণীজন জন্ম নেয়না। মানুষকে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবদ্দশায় পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ মৃত্যুর পর পুরস্কার পেলে সেটা যেমন সে জানলো না বা উপলব্ধি করতে পারলো না, তেমনি জীবিত অবস্থায় পুরস্কার দিলে তা মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।

বই হল জ্ঞানের আধার, যুগযুগ ধরে মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের পাতায়। অতীতের মনীষীদের সীমাহীন জ্ঞান ভান্ডারের পরিচয় লাভের জন্য বই হলো সর্বোত্তম মাধ্যম। মানুষ তার সাধনার ফল বিধৃত রেখে গেছে বইয়ের পাতায়। মানব জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে বইয়ের মধ্যে। ভবিষ্যতেও মানুষ একদিন এই বইয়ের মাধ্যমে তার অতীতকে জানবে। জ্ঞান আহরণে বইয়ের বিকল্প নেই। এই বইয়ের পাতার কালো অক্ষরে অমর হয়ে আছে মানুষের আত্মার চিরন্তন দ্যুতি। সারকথা অতীতকে জানতে হলে বই-ই একমাত্র সম্বল। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান হলেন এই বইয়ের জগতে এক স্বপ্নদ্রষ্টা, নির্মাতা। বাংলা ভাষায় ইসলামী পঠন-পাঠন সামগ্রীর চাহিদা পূরণে মাসিক মদীনা সম্পাদকের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। সাহিত্য সাংবাদিকতায় আলেম সমাজকে উৎসাহিত করতে সর্বদা ফিকির করেন, তরুণ প্রজন্মের আলেমদের সর্বতোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। সংবাদপত্র জগতে প্রকাশনা, পরিচালনা ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি যে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তা এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পবিত্র তাফসিরে মারেফুল কোরআনসহ তিনি ১০৫টি গ্রন্থ অনুবাদ/রচনা করেন। মাতৃভাষায় সীরাত সাহিত্যেও যে অবদান রেখেছেন, তা বিরল। বলতে গেলে তিনি বাংলায় সীরাত চর্চার পথিকৃৎ।

মৃত্যুর পর যেহেতু কেউ নতুন করে কোন যোগ্যতা অর্জন করে না, যেটুকু যোগ্যতা তা তো মৃত্যুর আগেই অর্জিত। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা চরিত্রবান ও দেশাত্মবোধে অনবদ্য খ্যাতি অর্জনকারীদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করা উচিত। সমাজসেবা, শিক্ষা, ধর্মপ্রচার, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা তথা বাংলাভাষায় ইসলামী সাহিত্যের ব্যাপক চর্চা, প্রচার প্রসারে যিনি নিজস্ব পরিমন্ডল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এমনি একজন জ্ঞান তাপস, গুণীজন হলেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। দেশ ও জাতির কল্যাণে দীর্ঘ অর্ধশতাব্দিব্যাপী তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যুক্তির আলোকে বিচার করলে নিঃসন্দেহে মূল্যায়নের মানদন্ডে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ কৃতী সন্তান। মাতৃভাষায় ইসলামী পঠন-পাঠনে তার অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি সময়ের দাবি। বাংলাভাষা ভাষীদের মধ্যে সীরাত চর্চার বিরল নজীর তিনি স্থাপন করেছেন। তার লিখিত, অনূদিত গ্রন্থাবলী মুসলিম মিল্লাতের জন্য (আকর) লাইফ গাইড হয়ে থাকবে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বঙ্গানুবাদ তার জীবনের সাফল্যের এক মাইলফলক। এছাড়া দেশের প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা ‘মাসিক মদীনা'র মাধ্যমে মাতৃভাষায় দ্বীন ইসলাম প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সকল মহলের নিকট একজন পরিচিত মুখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি এদেশের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত। ইসলামের মননশীল ও সাবলীল উপস্থাপনা এবং খেদমতে খালক'র তথা জনকল্যাণের জন্যও তিনি স্বীয় কর্মগুণেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। আমাদের দেশে অনেক লোকই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এবং প্রতি বছরই পাচ্ছেন। নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে যোগ্য এবং দেশ-জাতির জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে যদি জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয় তাহলে মাসিক মদীনা সম্পাদক, বহুগ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা সময়ের দাবী। মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আকরম খাঁ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উত্তরসুরী হিসেবেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান জাতীয় পর্যায়ে বহুবিধ কর্মকান্ডে অবদান রেখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমী ছাড়া আরো যে ক'টি প্রতিষ্ঠান প্রতি বছরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে থাকে, এসব পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে যেন কোন কারসাজির বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ না ওঠে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। গুণীজনের কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তার জীবদ্দশায় পুরস্কার দেয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে দল ও মতের উর্ধ্বে উঠতে হবে, গুণী ব্যক্তি কোন দলের, তার আদর্শ কি এসব না দেখে তার কর্মের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। আশার কথা হল মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে ‘জালালাবাদ স্বর্ণ পদক' প্রদান করছে সিলেটের জালালাবাদ লেখক ফোরাম। ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ সিলেটবাসীর পক্ষে মাওলানা খানের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও আদর্শ আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মূল্যায়নের মান দন্ডে বাংলার এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ এক কৃতী সন্তান হিসেবে নিজেই নিজের স্থান করে নিয়েছেন। ইতিহাস কারো জন্যে স্থান করে দিতে অপেক্ষা করে না অথবা জায়গা ফাঁক রাখে না। স্বীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমেই ইতিহাসে স্থান করে নিতে হয়। বাংলা ইসলামী সাহিত্যের দিকপাল-সাম্রাজ্যবাদের মোকাবিলায় ইসলামী চেতনার বিকাশ ঘটানোর মহানায়ক, বাংলায় সীরাত সাহিত্যের স্থপতি মোতামারে আলম আল-ইসলামী বাংলাদেশের সভাপতি এবং বিশ্ব মুসলিম লীগ ‘রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামী'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রধান, বাদশাহ ফাহাদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প মদীনা মুনাওয়ারাহ সৌদিআরব কর্তৃক মুদ্রিত তাফসীরে মারেফুল কোরআন এর বাংলা অনুবাদক, মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সুবিশাল কর্মকান্ডের মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর সামগ্রিক জীবনকে সামনে রেখে বিশাল গ্রন্থ প্রণয়ন আবশ্যক। আমাদের দেশের অন্যান্য আলেম-উলামা, পীর মাশায়েখ, নেতা-নেত্রীরা সাধারণত নিজের এলাকাতেই প্রসিদ্ধ লাভকরে থাকেন কিন্তু আমাদের আলোচ্য মহান এই ব্যক্তিত্ব এর ব্যতিক্রম। দেশের সীমানা পেরিয়ে ও তাঁর অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত রয়েছেন। মাসিক মদীনা সম্পাদক মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একজন দরদী অভিভাবক, চিন্তাবিদ, মহান ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান আমল থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত সংঘটিত প্রতিটি ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী মহাসম্মেলনের অন্যতম নেতা ও বক্তা হিসেবে তাঁকে প্রথম সারিতেই আমরা দেখেছি।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ইসলামী রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। নেতৃত্বের পালাবদলে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখানো পদের জন্য রাজনীতি করেননি। এই সত্যটি সচেতন মহল নিশ্চয় অকপটে স্বীকার করবেন। ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তের রাজনীতি থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে।

ষাটের দশকের শুরু থেকে নিয়ে এই বৃদ্ধবয়সে এদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাঁর সুদক্ষ লক্ষণীয়। প্রথম তিনি হযরত মাওলানা আতহার আলী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আসীন ছিলেন এবং পরবর্তীতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে জড়িত হয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্রের জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যান ও জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বিগত শতাব্দীর হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদের (রঃ) জেহাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতার উপর এ শতাব্দীর প্রথম দশকে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (র) (জমিয়তের) এ সংগঠনের গোড়া পত্তন করেন। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে জমিয়ত তার লক্ষ্য পথে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথেই অগ্রসর হয়েছে। জমিয়ত কর্মীরা সমকালীন প্রতিটি ফেতনার মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে। একথা সর্বজনবিদিত যে জমিয়ত এদেশের সর্বাপেক্ষা (পুরাতন) প্রাচীন ইসলামী সংগঠন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে তিনি যেভাবে জড়িত হলেন, তাঁর ভাষায় ঃ জমিয়ত নেতা শায়খুল হাদীস শামসুদ্দীন কাসেমী সাহেবের মাধ্যমেই আমি কুতবে জামান হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী এবং মুফতি মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাথে জড়িত হয়েছিলাম। দীর্ঘ তিন দশক জমিয়তের ব্যাপারে আমরা (কাসেমী সাহেব ও খান সাহেব) কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে সফর করেছি। দ্বীন-ধর্মের মর্যাদা রক্ষার প্রতিটি ময়দানে সক্রিয় থেকে কাজ করেছি। ফলে কাসেমী (র) এর সাথে আমার এত স্মৃতি রয়েছে যা স্বল্প পরিসরে ব্যক্ত করা অচিন্তনীয়।’’ জনাব খান স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, ‘‘১৯৬২ সালের ১ বৈশাখ পূর্বাঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী টর্নেডো হয়েছিল সেই টর্নেডো বিধ্বস্ত জনপদগুলোতে আমরা গিয়েছিলাম কিছু চিড়া-গুড় নিয়ে। দলনেতা ছিলাম আমি, কাসেমী সাহেব সহকর্মী। দলে ছিলাম ছয় জন। প্রত্যেকেরই মাথায় একটি চিড়ার বস্তা, কাঁধে ঝুলানো গুড় ভর্তি থলে। পায়ে হাঁটা গ্রামের পথে এই বোঝা বয়ে আমরা সকাল দশটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘুরেছিলাম। ফেরার পথে ক্ষুধার ক্লান্তিতে পা চলছিল না।’’

১৯৬৬ সালের ১৬ই মার্চ নবাব বাড়ীর আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব পাক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠন করা হয়। এ অধিবেশনে আগমন করেছিলেন কায়েদে জমিয়ত মুফতি মাহমুদ (র), হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী (র), মাওলানা গোলাম গৌছ হাজারভী (রঃ) ও সৈয়দ গুল বাদশাহ (রঃ) প্রমুখ আধ্যাত্মিক জ্ঞানে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। উক্ত অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (১৯০০-২০০১)কে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে তখন মাওলানা খান জমিয়তে যোগদান না করলেও এই অধিবেশনের মেহমানদের অবস্থানের ব্যবস্থা করে সহযোগিতা করেন এবং পূর্ব পাক জমিয়তের কমিটি গঠনের পর মরহুম কাসেমীর সাথে জনাব খান সাংগঠনিক কাজে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করেন। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাবেক সভাপতি, মাসিক আল-ফারুকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব মাওলানা আশরাফ আলী শায়খে বিশ্বনাথী (১৯২৮-২০০৫) ‘‘জমিয়ত পরিচিতি’’ নামক বইয়ে এ প্রসংগে বলেন, ‘‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠনের পর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব ও মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী সাহেব সাংগঠনিক কাজে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন। এমতাবস্থায় নাজিমে উমুমী (সাধারণ সম্পাদক কাসেমী সাহেব) ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে দফতরের কাজ পরিচালনা করতে লাগলেন। তখন নাজিমে দফতর ছিলেন মাওলানা আব্দুল জববার সাহেব। দফতর হতে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফরের প্রোগ্রাম হলো এবং প্রোগ্রাম অনুযায়ী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তের আমীর খলীফায়ে মদনী (রঃ) হাফিজ মাওলানা আব্দুল করিম সাহেব শায়েখে কৌড়িয়া, মাওলানা বশির আহমদ সাহেব শায়খে বাঘা (রঃ), মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী সাহেব দেশের কয়েক জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করলেন।’’

১৯৬৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারী পূর্ব পাক জমিয়তের কাউন্সিল অধিবেশন ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল সংলগ্ন ময়দানে শায়খে কৌড়িয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (রঃ)'র প্রস্তাবে পীর মুহসীন উদ্দীন আহমদ (দুদু মিয়াকে) আমিরে জমিয়ত নিযুক্ত করা হয় এবং মাওলান মুহিউদ্দীন খান কায়েদে জমিয়ত নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য যে, উক্ত অধিবেশনে শায়খে কৌড়িয়া, আব্দুল মতিন সাহেব শায়খে ফুলবাড়ী (র), শায়খুল হাদীস রিয়াছত আলী, খলীফায়ে মদনী হযরত লুৎফুর রহমান সাহেব শায়খে বরুণী, মোমেনশাহীর প্রবীণ জমিয়ত নেতা আল্লামা আরিফ রববানী, নেত্রকোণার মাওলানা মঞ্জুরুল হক, হযরত হাবিবুর রহমান সাহেব শায়খে রায়পুরী, মুফাজ্জল হুসেন বানিয়াচংগী, খলীফায়ে মদনী শায়খ আঃ গফফার মামরখানী, কুতুবে সুনামগঞ্জ আল্লামা আমীন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া, মাওলানা মকবুল হুসেন সাহেব হবিগঞ্জী, খলিফায়ে মদনী আব্দুল হক শায়খে গাজী নগরী, মাওলানা শফীকুল হক আকুনী, শহীদ শামসুল ইসলাম শেরপুরী সহ পাঁচ শতাধিক উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ- ১০ আসনে খেজুর গাছ প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ২৫/২৬ শে ডিসেম্বর ঢাকাস্থ পটুয়াটুলী জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় জমিয়তের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে মাওলানা আজীজুল হক সাহেব সভাপতি ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মহাসচিব নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনেই জমিয়ত নেতৃবৃন্দ তানজিমুল মাদারিস গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর ১৯৮০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা-লালকুঠি হলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ৩য় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। অত্র অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া ও আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রঃ)-কে পৃষ্ঠপোষক করা হয় এবং বর্তমান খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা আজীজুল হক সাহেবের পদ বহাল রাখা হয় এবং মদীনা সম্পাদক জনাব খান সাহেবকে জমিয়তের সহ-সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী কেন্দ্রীয় জমিয়তের কাউন্সিলে জনাব খান কার্যনির্বাহী সভাপতি নিযুক্ত হন।

১৯৮৮ ঈসায়ী ২৮শে মার্চ ঢাকা মীরপুরস্থ জামেয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদে অনুষ্ঠিত জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। উক্ত অধিবেশনে তাঁর বড় ছেলে মুসলিম জাহান সম্পাদক মোস্তফা মঈনুদ্দীন খান জমিয়তের যুব-বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ ঈসায়ী জমিয়তের কাউন্সিল অধিবেশনে জনাব খান জমিয়তের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ১লা জুন জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মীরপুরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী সভাপতি, মুফতী ওয়াক্কাস এম,পি মহাসচিব এবং মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। গত ২০ মে ২০০৫ মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীর ইন্তিকালের পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর জমিয়তের সভাপতি হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করা হলে তিনি খলিফায়ে মদনী শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ীর নাম পেশ করেন। সর্বসম্মতিক্রমে শায়খে ইমামবাড়ী সভাপতি এবং তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর গতবছর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী সভাপতি এবং মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জমিয়তের সর্বোচ্চনীতি র্নিধারণী ফোরামের প্রধান করা হয়।

তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি কালজয়ী পত্রিকা মাসিক মদীনা সম্পাদক, মাসিক মদীনা পরিবারের গৌরবদীপ্ত আলোকবর্তিকা, সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদনা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাবেতা আলম আল ইসলামীর কাউন্সিলর, মুতামার আল আলম আল ইসলামী এর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামী মোর্চার সভাপতি, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সর্বোচ্চনীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান ।

মাওলান মুহিউদ্দীন খানের প্রতিটি লেখা, ইসলামী জ্ঞানের এক একটা রত্ন ভান্ডার। বাংলাদেশ তথা মুসলিম বিশ্বের দাওয়াত কর্মী এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরাই তাঁকে একজন পথ প্রদর্শক, মর্দে মুজাহীদ বলে মনে করেন। ১৯৯৬ সালের আগে তাকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি, কিন্তু তিনি সে সময়ই আমার ও আমার মত আরও অনেক নবীনের কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক কিংবদন্তীর নায়ক, প্রেরণার বাতিঘর। পবিত্র কোরআন-হাদীসের অবমাননাসহ ইসলাম-বিরোধী কার্যকলাপ ও তৎকালীন ইসলাম পন্থী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁর (জ্বালাময়ী বক্তৃতা) দুঃসাহসী সংগ্রামের কাহিনী নানা মুখে শুনে এবং পত্র পত্রিকায় পড়ে সর্বশেষে তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থান করে আমি তাঁর ন্যায় নির্যাতিত মানবতার মুক্তির নিরাপোষ সংগ্রামে (ইসলামী আন্দোলনে) ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছি। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আজীবন সাহিত্য সাধনার পূর্ণ বিশ্বাসকে উপস্থাপন করেছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় নির্ভীক কলম সৈনিক মুহিউদ্দীন খান প্রায় অর্ধ শতাব্দী কাল যাবত এ দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার পরিমন্ডলে একজন সুদক্ষ শিল্পী হিসেবে বিচরণ করছেন। তিনি জীবনের শুরুতে তমুদ্দুন মজলিস ও হাকিম আজিজুল ইসলামের সম্পাদনাধীন সাপ্তাহিক নেজামে ইসলাম পত্রিকার সাথে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

দেশ ও জাতির চরম দুর্যোগ মুহুর্তে মুসলিম সংস্কৃতির সা©র্র্বক লালন ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৬১ ঈসায়ীর মার্চে মাসিক মদীনা প্রকাশ করেন। জনাব খান তাঁর ক্ষুরধার ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব লেখনীর তেজস্বী ভাষা এবং মিনতি বলিষ্ঠভাবে প্রভাব ফেলেছে নিষ্ক্রিয় আদম সন্তানদের সক্রিয়করণে। গণমানুষের চেতনাকে বিলীন করার লক্ষ্যে তাঁর প্রকাশিত মাসিক মদীনা পত্রিকাকে বন্ধের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। সরকারও কতিপয় চক্রান্তকারী মহল সম্পাদক মাওলানা খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করে। মাসিক মদীনায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয়তে এনজিওদের বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড সম্পর্কে বক্তব্য প্রকাশের কারণে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল। মানহানি সংক্রান্ত একটি মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষে ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আঃ হান্নান এক আদেশে মাওলানা খানকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন।

আজকের ইসলামিক ফাউন্ডেশন (পূর্ব নাম-ইসলামী একাডেমী) এবং বাংলাদেশের বেসরকারী বা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ‘‘বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়া’’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। দেশের আলেম সমাজ, বিশেষতঃ কওমী মাদরাসাগুলির হালচিত্র উন্নয়ন এবং এই শিক্ষা ধারাটিকে যুগ-চাহিদার উপযোগী করে তোলার বিষয়ে তিনি সবসময় চিন্তা করতেন। এসম্পর্কে সাপ্তাহিক জমিয়ত পত্রিকার ৬ষ্ঠ বর্ষ, ১৪তম সংখ্যায় তিনি লিখেন, জমিয়তে ওলামার অফিসে বসে মাওলানা রেজাউল করীম ইসলামাবাদীর মুখে বেফাক গঠনের সংকল্পের কথাশুনে অন্তত পনেরো বছর আগের মুরুববীগণের আকাংখাটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পেলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গেই সর্ব প্রকার সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করে ফেললাম। তখনকার সময়টা ছিল আমাদের জন্য বড়ই প্রতিকূল। জাতীয় ভিত্তিতে একটা সম্মেলন আয়োজনের ব্যয়ভারের সংকুলান ছিল আমাদের ন্যায় কর্মীদের পক্ষে একটা বিরাট বোঝা। কিন্তু মাওলানা ইসলামাবাদী হিম্মত করলেন। লালবাগের শায়েস্তা খান হল ভাড়া করা হলো।’’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জিরি ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ও জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়ার প্রাক্তন মুহাদ্দেস প্রিন্সিপাল মাওলানা রেজাউল করিম ইসলামাবাদীসহ জমিয়ত নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় '৭৮ সালে শায়েস্তা খান হলের সেই সম্মেলনেই ‘বেফাক' গঠিত হয়। জামেয়া কোরআনিয়া লালবাগের সেক্রেটারি মরহুম হাজী আব্দুল ওয়াহহাব ঐ হল ভাড়ার ব্যবস্থা করলেন। ঢাকা নিবাসী জনাব আলহাজ্ব মুহাম্মদ আকীল এবং গেন্ডারিয়ার বর্ষিয়ান মুরববী হাজী কোরবান আলী সাহেব উল্লেখযোগ্য চাঁদা দিয়ে সহায়তা করলেন। জমিয়তের সেক্রেটারি জনাব মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেবের কাঁধে ন্যস্ত হল মুদ্রণজনিত যাবতীয় ব্যয়ভার। ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার বড় একটি কামরা ছিল বেফাকের তৎকালীন কার্যালয়। বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়ার প্রথম সভাপতি ছিলেন-জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়ার প্রধান হযরত মাওলানা হাজী ইউনুছ (রহ) এবং জনাব রেজাউল করীম ইসলামাবাদী ছিলেন মহাসচিব। ‘‘বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়া’’ নামক সংস্থাটি আমাদের আকাবর মুরুববীগণের দীর্ঘকালের লালিত একটি মহৎ স্বপ্নের বাস্তবায়ন, আর এই বাস্তবায়ন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের উদ্যোগ। অন্য কথায় এটি জমিয়তেরই সন্তান। সময়ের সাহসী বীর সন্তান মাওলানা খান কখনো কাউকে ভয় করেননি, দমবার পাত্র নন, যখন যেখানেই গিয়েছেন সাহস ও আগ্রহের সাথে দ্বীনি কথা-বার্তা বলেছেন এবং বলে যাচ্ছেন অকুণ্ঠ চিত্তে। মাসিক মদীনার সম্পাদকীয় কলামটি এর বাস্তব প্রমাণ। তিনি গুণ-বৈশিষ্ট্য রপ্ত করেছিলেন (ছোট বেলা থেকেই) স্বীয় উস্তাদ কিংবদন্তির মহানায়ক মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রঃ) এর কাছ থেকে।

ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে তিনি জমিয়ত ছাড়াও আরও কয়েক সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চার সাবেক সভাপতি, বেফাকুল মাদারিছ বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ জাতীয় সীরাত কমিটির সভাপতি, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, চারদলীয় জোটের অন্যতম রূপকার, ইসলামী পত্রিকা পরিষদের সভাপতি, ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহবায়কসহ আরও অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা। ইসলামী আন্দোলনের বীর সিপাহসালার মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের প্রথম সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। মোটকথা জনাব মুহিউদ্দীন খান সমকালীন সকল ইসলামী আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ এই মহান ব্যক্তিত্ব বাংলা ১৩৪২ সনের ৭ই বৈশাখ রোজ শুক্রবার জুমার নামাজের আযানের সময় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী, হযরত শাহ শামসুদ্দিন তুর্ক, মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগীর স্মৃতি বিজড়িত তৎকালীন বাংলার সর্বাপেক্ষা বড় জেলা, ঐতিহ্যবাহী মোমেনশাহী জেলার গফরগাঁও উপজেলাধীন আনসার নগর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী দরাজ দীল মাওলানা খানের পিতা বিশিষ্ট সাধক পুরুষ, প্রবীণ শিক্ষাবিদ মৌলভী হাকিম আনছার উদ্দিন খান। তাঁর মাতা ধর্মপরায়ণা রমনী মোছাঃ রাবেয়া খাতুন। দাদাঃ মুন্সি তৈয়ব উদ্দিন খাঁন, দাদীর নাম কলমজান বিবি। এক বছর বয়সে তিনি দাদাকে হারান। মৌলভী আনছার উদ্দীন খাঁন, ৬ ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন। তরফের অন্যতম আউলিয়া হযরত শামসুদ্দিন তুর্ক (র) (মাজার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির কুড়িগাই নামক গ্রামে) এই মহান বুযুর্গ মাওলানা খানের মাতামহীর পূ্র্ব পুরুষ ছিলেন। তাঁর মাতামহীর পিতার নাম মুন্সী তৈয়ব উদ্দিন (র)। মরহুম মুন্সী সাহেবের সাত কন্যার সকলকেই সমকালীন বিশিষ্ট আলেমের নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠ কন্যাকে বিয়ে দিলেন বিখ্যাত ফার্সী কবি মৌলভী নজাবতুল্লাহর নিকট।

স্বীয় পিতা-মাতা এই দুই উস্তাদের পাঠশালাতেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন ১২ তখনই তার স্নেহময়ী মাতা মোছাঃ রাবেয়া খাতুন ইহধ