শাহ আহমেদ শাফি |
আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকায় আহমদ শফী : পরিবর্তন কি সুনিশ্চিত
December 23, 2013 at 5:30pm
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগের প্রথমার্ধে ইরানে সংঘটিত
বিপ্লবের কথা অনেকেরই অজানা নয়। বিদেশী প্রভূদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে
গিয়ে আধুনিক ইরানের সর্বশেষ শাসক সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর পতন
ঘটে । বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সেদিন আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে ছিল ইরানের দিকে ।
আধুনিক ইরানের যে কয়জন শাসক ইরানের উন্নয়ন করেছিল তাদের মধ্যে রেজা শাহ
পাহলভী সবার শীর্ষে । ইরানের শাসন আমলের মধ্যে যে সময়গুলোকে সোনালী সময় হিসেবে
মূল্যায়ণ করা হয় তার মধ্যে রেজা শাহ পাহলভীর শাসন আমল অন্যতম । রেজা শাহ
পাহলভী এবং তার সভাসদ বৃন্দ ইরানের এমন কোন স্থান বাকী রাখেন নি যেখানে
তাদের উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করে নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রায়
ইরানকে রেজা শাহ পাহলভী যে ভাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে
সহায়তা করে সে পদ্ধতি দেখে গোটা বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল । বিদেশী
প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার শর্তে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করলেও তার শাসন
আমলের শুরুর দিকের কার্যকলাপ তাকে ইরানের জনগনের কাছে অত্যন্ত প্রিয়
শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয় । জনগনের সে দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রেজা শাহ
পাহলভী ধীরে ধীরে তার বাসনা প্রতিষ্ঠার পথে পা রাখেন ।
১৯৫৩ সালে
ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে বেশ কয়েক বছর
তিনি অত্যন্ত নীতি নৈতিকতার সাথে তার
রাজকার্য পরিচালনা করেন । রাজা শাহ
পাহলভীর পূর্ব পুরুষের শাসনামল দীর্ঘ
আড়াই হাজার বছর ধরে চলে আসছিল । রাজা শাহ
পাহলভীর পূর্ব পূরুষ মহামতি
সাইরাস থেকে তাদের সাহসী ও শক্তিশালী
শাসনামল চলে আসেছে । যে কারনে রেজা
শাহ পাহলভীর রক্ত অন্যান্য শাসকদের
রক্তের চেয়ে বেশী তেজস্বী ছিল । বিশ্বের
অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে যে কয়জন
শাসক বিশ্বের বুকে তাদের সাহসিকতার
জন্য পরিচিত পেয়েছিল তাদের মধ্যে রেজা
শাহ পাহলভী অন্যতম । বিশ্বের
অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে রাষ্ট্রের
সিংহভাগ ক্ষমতা শাসকদের হাতে
ন্যস্ত থাকলেও সভাসদগনের কাছেও কিছু
ক্ষমতা ন্যায্য থাকত । এক্ষেত্রে রেজা
শাহ পাহলভী ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ।
তার কাছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা
এমনকি রাষ্ট্রের চরম ও চুড়ান্ত ক্ষমতাও
ন্যস্ত ছিল । এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে
তিনি বাকশালী মানসিকতার হয়ে ওঠেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে সাথে
সাথে তাকে শিরঃচ্ছেদ বা গুলি করে হত্যা করা হত । যে কারনে তার বিরুদ্ধে কোন
অভিযোগ তোলার সাহস কেউ করত না । ১৯৫৩ সালে ক্ষমতায় উঠে আসার পর থেকে ১৯৭৯
সালে ১৬ ই জানুয়ারী পর্যন্ত রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তার হাতে ন্যস্ত
ছিল । তাছাড়াও ইঙ্গ-মার্কিন বাহীনির সরাসরি মদদ পাওয়ার কারনে তিনি নিজেকে
ইরানের সর্বময় ক্ষমতার মালিক মনে করতেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই
অন্যান্য অত্যাচারী শাসকের মত সরকারী পেটোয়া পুলিশ এবং সেনা বাহীনি দ্বার
রাস্তায় বা প্রকাশ্য স্থানে গুলি করে হত্যা করা হত ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন তার দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসন আমলে ইরানে
ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে কারও অবস্থান করা যুক্তি-যুক্ত
ছিল না । কিন্তু বিশ্লেষকদের সে ধারনাকে ভূল প্রমান করে , তার বিরুদ্ধে
জনগনের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ । প্রথমদিকে রেজা শাহ পাহলভীর শাসনের উপর জনগন
খুশি থাকলেও তার কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস ,
আচরন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলনের
কারনে জনগন তার বিরুদ্ধে চলে যায় । জনগনের এ ক্ষোভ ধীরে ধীরে
প্রকাশ পেতে থাকলেও ১৯৭৭ সালে ব্যাপক ভাবে প্রকাশ পায় । রেজা শাহ পাহলভীর উপর
মুসলিম জনগন অনেক কারনেই ক্ষেপে ছিল । তাদের সে ক্ষোভকে গতি দিয়েছিল ইসলাম
বিরোধী অনেক প্রথার প্রচলন । সে সকল প্রথা পালনে রাজা শাহ পাহলভী নিষেধ
না করে বরং এসব কাজ যাতে বিনা বাধাঁয় পালন করা যায় তার ব্যবস্থা করে দেন ।
যার ধারাবাহিকতায় ইরানের রাস্তায় রাস্তায় মদের দোকান চালু হয় ।
শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং শহরতলীত বিভিন্ন নাইটক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়
যাতে ড্যান্স পার্টির নামে সারা রাত মদ ,
জুয়া ও অবাধ যৌনাচার চলে । এ অসামাজিক
কাজ থেকে ইরানের খোদাভীরু লোকেরা সকাল বেলা ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে
থেকে মুক্তি চেয়ে অন্যসব কাজে বের হত ।
রেজা শাহ পাহলভীর শাসনামলে সবচেয়ে বেশি অপমান
করা হয়েছে ইরানের আলেমদেরকে । তিনি নিজে ধর্মবিদ্বেষী থাকার কারনে তার
অনুসারীরা তাদের কাজকে সামনের দিকে এগিযে নিতে আর কোন বাধার সম্মূখীন হয়
নি । তেহরানের রাস্তায় কোন দাঁড়ি টুপি পড়া লোক পাবলিক বাসে চড়লেই বাসের কন্ডাক্টার বলত , আমরা কোন দাঁড়ি-টুপি পড়া লোক এবং বেশ্যাদেরকে বাসে
চড়াই না । এ রকম জগন্য ভাষা দিয়ে লাঞ্ছিত করে আলেমদেরকে বাস থেকে ফেলে
দেয়া হত । এছাড়াও রেজা শাহ তার সন্তানগন এবং স্ত্রী পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত
ছিল । তাদের প্রত্যেকেই পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্ধ-অনূকরন করত ।
রাজা শাহ এবং তার স্ত্রী ইরানী সংস্কৃতি ভূলে বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান
এবং দেশী বিদেশী অনুষ্ঠানে পশ্চিমা পোশাক পরিধান করত । যেটা ইরানের
ধর্মপ্রান মুসলমানদের কাছে একেবারেই অশালীন পোশাক হিসেবে চিহ্নিত ছিল ।
ইসলামের সাথে এরকম জনগন্যতম বেয়াদবের হাত থেকে ইরানবাসী মুক্তি পাওয়ার
জন্য আল্লাহর কাছে সাহয্য প্রার্থনা করত । মুসলমানদের মনের অনুভূতি উপলব্ধি
করে এগিয়ে আসে ইসলামের একজন খাদেম ।
এতদিনের সে আকঙ্খিত দিন ইরানের মুসলমানদেরকে হাতছানি দিতে
শুরু করে । ইরানের একজন কম পরিচিত আলেম আয়াতুল্লাহ খোমেনী অনুধাবন করেন
সাধারন মুসলমানদের মনের বাসনা । শিয়াদের শহর নাযাফে তিনি রাজা শাহ
পাহলভী বিরোধী সমাবেশ আহ্বান করেন । সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে এ সমাবেশে জড়ো
হন লাখ লাখ মানুষ । রাজা শাহ পাহলভী এবং তার অনুষদ বর্গ প্রথমদিকে এ
সমাবেশের ব্যাপারে মাথা ঘামায় না । কিন্তু দিনের পর দিন পরিস্থিতির রং বদলাতে
শুরু করে । ইরানের রাস্তায় নেমে আসে অগনিত লোক । অবশেষে শেষ হয়
পতীক্ষার প্রহর । দিনটি ছিল শুক্রবার । সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ লোক জুমাআর
নামাজ আদায় শেষে তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে । রাজা শাহ পাহলভী মুক্তির কোন
পথ না পেয়ে জনগনের উপর শেষ কামড় বসায় । ইতিহাসের প্রত্যেক অত্যাচারী
শাসকের মতো তিনিও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে শুরু করে । দিনটি ছিল ১৯৭৮
সালে ৮ ই সেপ্টেম্বর । রাজা শাহ পাহলভীর পেটোয়া বাহীনি সমাবেশরত
বিশাল জনসমাগমের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় । এ গুলিতে অগনিত মানুষ শাহাদাৎ বরন
করেন । শাহের বাহীনির নগ্ন গুলির সামনে মানুষ দাঁড়াতে না পেরে সাময়িক
ছত্রভঙ্গ হয় যায় তবে সেখান থেকেই রাজা শাহ পাহলভীর পতনের দ্বার উম্মোচিত হতে
শুরু করে ।
জনগনকে ছত্রভঙ্গের পর ইরানে নিযুক্ত সিআইএর এজেন্ট ওয়াশিংটন
ডিসিতে অবস্থিত সিআইএর হেডকোয়াটারে রিপোর্ট করে “ ৮ই সেপ্টেম্বরের
ঘটনার পর শাহের শাসনক্ষমতা এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে যে , আগামী ১০ বছরে
বিরোধী পক্ষ মাথা তুলো দাঁড়াতে পারবে না”
। তাদের এ শক্তিশালী রিপোর্টকে ভূল
প্রমানিত করে ৮ ই সেপ্টেম্বরের মাত্র ৩ মাসের মাথায় অর্থ্যাৎ ১৬ ই জানুয়ারী
১৯৭৯ মাত্র এক দিনের মাথায় গন-অভ্যূত্থানে রাজ শাহ পাহলভীর পতন হয় ।
রাজা শাহ পাহলভীর পতনের পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর
অমাবস্যার অন্ধকার । এতদিনে তাকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্যকারী এবং যাদের পরিকল্পনা
বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সমস্ত শাসন আমাল কাজ করেছেন সেই মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় । পরবর্তীতে তিনি
ইতালী যান এবং ইতালীর সরকার তাকে অসম্মান করে বের করে দেয়। পরে তিনি তার
বিমান নিয়ে পানামায় যান । পানামার সরকারও তাকে গ্রহন করে না । অনেক দেন
দরবারের পর মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তাকে মিশরে ঢোকার
অনুমতি দেয় । তার পিছনে অবশ্য কারনও ছিল । কেননা শাহের প্রথম স্ত্রী
ফৌজিয়া ছিলেন মিসরের প্রয়াত এবং ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ ফারুকের বোন । মিশরবাসীরা
বরাবরই রাজ পরিবারের উপর শ্রদ্ধা রাখত । সুতরাং মিসরের রাজকন্যার
স্বামী ভিক্ষুকের মত দেশে দেশে আশ্রয় ভিক্ষা করে বেড়াবে সেটা মিশরবাসীর ঐতিহ্যে
আঘাত করে ।
অবশেষে অনেক গ্লানীসহ্য করে ১৯৮০ সালের ২৭ শে জুলাই
মরনব্যাধি কান্সারে আক্রান্ত অবস্থায় এ অত্যাচারী শাসক মৃত্যুবরণ করেন । আজও
বিশ্ব মুসলিম তার নাম উচ্চারন করার সময় ঘৃণার সবটুকু মাত্রা প্রয়োগ করে তার
নাম উচ্চারন করে ।
ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের মুসলমানদের
প্রান পুরুষ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী ।
বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে সরকারও তাদের বিদেশী
প্রভূদের পরিকল্পনার নিখুঁত ছক একেঁছে এদেশের মানুষের কপালে । ব্যাপক
সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্মকে করা হয়েছে উপেক্ষিত । ধর্ম বিরোধী একের
পর এক আইন পাস করা হয়েছে সংসদে । নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুসলমানদের ধর্মীয় বিচারিক ব্যবস্থা
ফতোয়াকে । সংবিধান থেকে তুলে দেয়া হয়েছে
আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ।
পরবর্তীতে গন-আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার
সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও
বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হলেও কাযর্কর করা
হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা । শতকরা ৯০ ই
শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এ ভূ-খন্ডে ধর্ম
নিরপেক্ষ আইন পাস করা গোটা
মুসলিমদেরকে অপমান করার শামিল । সরকার
একই রুমের এক কোনে নামাজ পড়ার জন্য
জায়নামায বিছিয়ে রেখে অন্য কোনে মদ-জুয়ার
আসর বসানোর ব্যবস্থা করছে ।
বাংলাদেশের মানুষের একটি বৃহৎ অংশ
আলেমদের আজ অপমানের সীমা নাই । দাড়ি ,
টুপি ও জুব্বা পরিহিত মানুষদের অবস্থা
রাজা শাহ পাহলভীল শাসনামলের আলেমদের
অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । পৃথিবীর
মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি
আল্লাহ প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ
টুপিকে কুকুরের মাথায় পড়ানো
হয়েছে । মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ
কুরআন মাজীদ পোড়ানো হয়েছে ।
মসজিদে নামায আদায়রত মুসল্লিদের উপর গুলি
চালানো হয়েছে । মসজিদে তালা বদ্ধ
করে রাখা হয়েছে । হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর
ব্যঙ্গ ছাপা হলেও সরকার তার
বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি ।
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব
কুরবানীকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে এক
কুলাঙ্গার বাংলাদেশের বিচারালয়ে আবেদন
করতে যাওয়ার পর তাকে পুলিশ প্রহরায় বাসায়
পৌঁছে দেয়া হয়েছে । নির্বিচারে
মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে । মাদ্রাসা
শিক্ষার সিলেবাসকে এমন ভাবে
পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে মাদ্রাসা থেকে
প্রকৃত আলেম হয়ে কেউ বের হতে পারবে
না । ধর্মপ্রান মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব
পড়ার প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সরকার
তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন
করে নি । বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়
জড়িয়ে আলেমদের জেল জরিমানার মাধ্যমে
হয়রানি করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ
ইরানের শাসক রাজশাহ পাহলভীর পতনের জন্য
আয়াতুল্লাহ খোমেনী যে ভূমিকা পালন
করেছিল বাংলাদেশের শাসকদের অপসারণে সেই
একই ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে এসেছেন
বাংলাদেশের সু-প্রসিদ্ধ আলেম , শত আলেমের গর্বিত
উস্তাদ হাটহাজারী মাদরাসার
মুহতামিম আল্লামা শাহ-আহমদ শফী সাহেব ।
হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে
বাংলাদেশের সকল হক্কানী আলেমের সম্বনয়ে
গঠিত বিশাল এক সম্প্রদায় নিয়ে তিনি
প্রথমে সরকারকে কোরআন ও হাদীসের আলোকে
দেশের মুসলামনদের শান্তি ও ইসলামকে
তার ভাবমুর্তি নিয়ে অবস্থান করার জন্য
শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকারের কাছে ১৩
দফা দাবী পেশ করেন । সরকার প্রথম দিকে এ
দাবীগুলো মানার ব্যাপারে আশ্বাস
দিলেও পরবর্তীতে সেগুলোকে মানা যাবে না
বলে জানিয়ে দেয় । এ জন্য ফুঁসে উঠতে
থাকে বাংলাদেশের আলেম ও ধর্মপ্রাণ
মুসলমানগন । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর
আন্দোলনের আদলে সমাবেশের ডাক দেন
বাংলাদেশের রাজধানী শহরের বানিজ্যিক
প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে ।
চলতি বছরের ৫ ই মে চলে এ সমাবেশ ।
সরকারী বাহিনী ও সরকারী সমর্থক কর্মীদের
সাথে দিনব্যাপী সংঘর্ষে হেফাজতে
ইসলামের অনেক নেতাকর্মী শাহাদাৎ বরণ করেন
। দিনের এ সংঘর্ষই শেষ নয় ৫ই
এপ্রিল দিনগরিয়ে রাত হলে বিশ্ববাসী
স্বাক্ষী হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের । রাত
৩.৩০ মিনিটের সময় সরকারী বাহিন
ক্রাকডাউনের মাধ্যমে হেফাজতের সমর্থক ,
নেতা ও কর্মীদের উপর
ল্যাম্পপোষ্ট বন্ধ করে নির্বিচারে গুলি চালায় । ভয়াল সে রাতে কতলোক মারা
গিয়েছিল তার সঠিক হিসাব আজও পাওয়া যায়নি । তবে বিশ্ব মিডিয়ার মতে এ
সংখ্যা নিতান্তই কম নয় । বাংলাদেশের মানবতাবাদী সংস্থা অধিকার প্রকাশিত
এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে হেফাজতের ওই সমাবেশে সরকারী তান্ডবে যারা মারা
গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে ২০১ জনের পূর্ণ পরিচয় তাদের কাছে আছে ।
হেফাজতের এ বিশাল আন্দোলনকে দমন করে সরকার ভেবেছিল হেফাজত সরকারে বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে পুনরায়
দাঁড়াতে পারবে না । তবে হেফাজতে ইসলাম সরকারী মন্ত্রীদের ভাষন অনুযায়ী
লেজগুটিয়ে বসে থাকে নি । তারা আবারও একতাবদ্ধ হয়ে ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ ঢাকায় সমাবেশ
করার ঘোষণা দিয়েছে । প্রথম আন্দোলনের বিজয়ের সোপান রচনাকারী দলের দীর্ঘ
৯ মাস ২০ দিন পরের আন্দোলনে তাদের কি পরিনতি হবে বা সরকারের কোন অবস্থার
মুখোমূখি হবে সেটা ২৪ ঘন্টা পরেই জানা যাবে । তবে ইরানের আয়াতুল্লাহ
খোমেনীর দলের মত আল্লাম শফী সাহেবের দল বিজয়ের হাসি হাসতে পারুক বা না পারুক
তারা হেফাজতের উত্থানে চিন্তিত হয়ে পড়েছে সেটা নির্ধিদ্বায় বলা যায় ।
সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা জানিয়েছেন ২৪শে ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায়
সমাবেশ করতে দেয়া হবে না । সরকারের কথা রাখতে ডি এম পি হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায়
সমাবেশের অনুমতি দেয় নি । গতকাল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে
আমীর এবং ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী
সাহেবকে র্যাব সদস্যরা আটক করে হেফাজতে ইসলামের পরিকল্পনা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসাবাদ করে । অবশ্য র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কাসেমী সাহেবকে
গেফতার করা হয়নি । কিছু তথ্য জানার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ
শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে । র্যাব তাদের কথানুযায়ী কাসেমী সাহবকে ছেড়েও
দিয়েছে । অপরদিকে আল্লামা শফী সাহেব জানিয়েছেন সরকার যদি হেফাজতে ইসলামের
সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করে তবে হেফাজতে ইসলামের রক্তের বিনিময়ে হলেও সমাবেশ
সফল করা হবে । পাল্টা-পাল্টি বক্তৃতার কারনে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু
হয়েছে । জয় পরাজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মত শফী সাহেবের
নিয়তি হলে জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন অনেকটা নিশ্চিত ।
লেখক : রাজু আহমেদ
। শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক ।
সরকারী বি এম কলেজ
, বরিশাল ।
No comments:
Post a Comment