Friday, February 28, 2014

শাহ আহমেদ শাফি


আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকায় আহমদ শফী : পরিবর্তন কি সুনিশ্চিত
December 23, 2013 at 5:30pm
     বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগের প্রথমার্ধে ইরানে সংঘটিত বিপ্লবের কথা অনেকেরই অজানা নয়। বিদেশী প্রভূদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আধুনিক ইরানের সর্বশেষ শাসক সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর পতন ঘটে । বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সেদিন আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে ছিল ইরানের দিকে । আধুনিক ইরানের যে কয়জন শাসক ইরানের উন্নয়ন করেছিল তাদের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভী সবার শীর্ষে । ইরানের শাসন আমলের মধ্যে যে সময়গুলোকে সোনালী সময় হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয় তার মধ্যে রেজা শাহ পাহলভীর শাসন আমল অন্যতম । রেজা শাহ পাহলভী এবং তার সভাসদ বৃন্দ ইরানের এমন কোন স্থান বাকী রাখেন নি যেখানে তাদের উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করে নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রায় ইরানকে রেজা শাহ পাহলভী যে ভাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সহায়তা করে সে পদ্ধতি দেখে গোটা বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল । বিদেশী প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার শর্তে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করলেও তার শাসন আমলের শুরুর দিকের কার্যকলাপ তাকে ইরানের জনগনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয় । জনগনের সে দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রেজা শাহ পাহলভী ধীরে ধীরে তার বাসনা প্রতিষ্ঠার পথে পা রাখেন ।
    ১৯৫৩ সালে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে বেশ কয়েক বছর তিনি অত্যন্ত নীতি নৈতিকতার সাথে তার রাজকার্য পরিচালনা করেন । রাজা শাহ পাহলভীর পূর্ব পুরুষের শাসনামল দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর ধরে চলে আসছিল । রাজা শাহ পাহলভীর পূর্ব পূরুষ মহামতি সাইরাস থেকে তাদের সাহসী ও শক্তিশালী শাসনামল চলে আসেছে । যে কারনে রেজা শাহ পাহলভীর রক্ত অন্যান্য শাসকদের রক্তের চেয়ে বেশী তেজস্বী ছিল । বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে যে কয়জন শাসক বিশ্বের বুকে তাদের সাহসিকতার জন্য পরিচিত পেয়েছিল তাদের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভী অন্যতম । বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে রাষ্ট্রের সিংহভাগ ক্ষমতা শাসকদের হাতে ন্যস্ত থাকলেও সভাসদগনের কাছেও কিছু ক্ষমতা ন্যায্য থাকত । এক্ষেত্রে রেজা শাহ পাহলভী ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম । তার কাছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা এমনকি রাষ্ট্রের চরম ও চুড়ান্ত ক্ষমতাও ন্যস্ত ছিল ।  এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে তিনি বাকশালী মানসিকতার হয়ে ওঠেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে সাথে সাথে তাকে শিরঃচ্ছেদ বা গুলি করে হত্যা করা হত । যে কারনে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলার সাহস কেউ করত না । ১৯৫৩ সালে ক্ষমতায় উঠে আসার পর থেকে ১৯৭৯ সালে ১৬ ই জানুয়ারী পর্যন্ত রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তার হাতে ন্যস্ত ছিল । তাছাড়াও ইঙ্গ-মার্কিন বাহীনির সরাসরি মদদ পাওয়ার কারনে তিনি নিজেকে ইরানের সর্বময় ক্ষমতার মালিক মনে করতেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই অন্যান্য অত্যাচারী শাসকের মত সরকারী পেটোয়া পুলিশ এবং সেনা বাহীনি দ্বার রাস্তায় বা প্রকাশ্য স্থানে গুলি করে হত্যা করা হত ।
     বিশ্লেষকরা মনে করেন তার দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসন আমলে ইরানে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে কারও অবস্থান করা যুক্তি-যুক্ত ছিল না । কিন্তু বিশ্লেষকদের সে ধারনাকে ভূল প্রমান করে , তার বিরুদ্ধে জনগনের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ । প্রথমদিকে রেজা শাহ পাহলভীর শাসনের উপর জনগন খুশি থাকলেও তার কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস , আচরন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলনের কারনে জনগন তার বিরুদ্ধে চলে যায় । জনগনের এ ক্ষোভ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকলেও ১৯৭৭ সালে ব্যাপক ভাবে প্রকাশ পায় । রেজা শাহ পাহলভীর উপর মুসলিম জনগন অনেক কারনেই ক্ষেপে ছিল । তাদের সে ক্ষোভকে গতি দিয়েছিল ইসলাম বিরোধী অনেক প্রথার প্রচলন । সে সকল প্রথা পালনে রাজা শাহ পাহলভী নিষেধ না করে বরং এসব কাজ যাতে বিনা বাধাঁয় পালন করা যায় তার ব্যবস্থা করে দেন । যার ধারাবাহিকতায় ইরানের রাস্তায় রাস্তায় মদের দোকান চালু হয় । শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং শহরতলীত বিভিন্ন নাইটক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় যাতে ড্যান্স পার্টির নামে সারা রাত মদ , জুয়া ও অবাধ যৌনাচার চলে । এ অসামাজিক কাজ থেকে ইরানের খোদাভীরু লোকেরা সকাল বেলা ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে থেকে মুক্তি চেয়ে অন্যসব কাজে বের হত । 
     রেজা শাহ পাহলভীর শাসনামলে সবচেয়ে বেশি অপমান করা হয়েছে ইরানের আলেমদেরকে । তিনি নিজে ধর্মবিদ্বেষী থাকার কারনে তার অনুসারীরা তাদের কাজকে সামনের দিকে এগিযে নিতে আর কোন বাধার সম্মূখীন হয় নি । তেহরানের রাস্তায় কোন দাঁড়ি টুপি পড়া লোক পাবলিক বাসে চড়লেই  বাসের কন্ডাক্টার বলত , আমরা কোন দাঁড়ি-টুপি পড়া লোক এবং বেশ্যাদেরকে বাসে চড়াই না । এ রকম জগন্য ভাষা দিয়ে লাঞ্ছিত করে আলেমদেরকে বাস থেকে ফেলে দেয়া হত । এছাড়াও রেজা শাহ তার সন্তানগন এবং স্ত্রী পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল । তাদের প্রত্যেকেই পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্ধ-অনূকরন করত । রাজা শাহ এবং তার স্ত্রী ইরানী সংস্কৃতি ভূলে বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং দেশী বিদেশী অনুষ্ঠানে পশ্চিমা পোশাক পরিধান করত । যেটা ইরানের ধর্মপ্রান মুসলমানদের কাছে একেবারেই অশালীন পোশাক হিসেবে চিহ্নিত ছিল । ইসলামের সাথে এরকম জনগন্যতম বেয়াদবের হাত থেকে ইরানবাসী মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে সাহয্য প্রার্থনা করত । মুসলমানদের মনের অনুভূতি উপলব্ধি করে এগিয়ে আসে ইসলামের একজন খাদেম ।  

    এতদিনের সে আকঙ্খিত দিন ইরানের মুসলমানদেরকে হাতছানি দিতে শুরু করে  ইরানের একজন কম পরিচিত আলেম আয়াতুল্লাহ খোমেনী অনুধাবন করেন সাধারন মুসলমানদের মনের বাসনা । শিয়াদের শহর নাযাফে তিনি রাজা শাহ পাহলভী বিরোধী সমাবেশ আহ্বান করেন । সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে এ সমাবেশে জড়ো হন লাখ লাখ মানুষ । রাজা শাহ পাহলভী এবং তার অনুষদ বর্গ প্রথমদিকে এ সমাবেশের ব্যাপারে মাথা ঘামায় না । কিন্তু দিনের পর দিন পরিস্থিতির রং বদলাতে শুরু করে । ইরানের রাস্তায় নেমে আসে অগনিত লোক । অবশেষে শেষ হয় পতীক্ষার প্রহর । দিনটি ছিল শুক্রবার । সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ লোক জুমাআর নামাজ আদায় শেষে তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে । রাজা শাহ পাহলভী মুক্তির কোন পথ না পেয়ে জনগনের উপর শেষ কামড় বসায় । ইতিহাসের প্রত্যেক অত্যাচারী শাসকের মতো তিনিও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে শুরু করে । দিনটি ছিল ১৯৭৮ সালে ৮ ই সেপ্টেম্বর । রাজা শাহ পাহলভীর পেটোয়া বাহীনি সমাবেশরত বিশাল জনসমাগমের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় । এ গুলিতে অগনিত মানুষ শাহাদাৎ বরন করেন । শাহের বাহীনির নগ্ন গুলির সামনে মানুষ দাঁড়াতে না পেরে সাময়িক ছত্রভঙ্গ হয় যায় তবে সেখান থেকেই রাজা শাহ পাহলভীর পতনের দ্বার উম্মোচিত হতে শুরু করে ।
    জনগনকে ছত্রভঙ্গের পর ইরানে নিযুক্ত সিআইএর এজেন্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত সিআইএর হেডকোয়াটারে রিপোর্ট করে ৮ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর শাহের শাসনক্ষমতা এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে যে , আগামী ১০ বছরে বিরোধী পক্ষ মাথা তুলো দাঁড়াতে পারবে না। তাদের এ শক্তিশালী রিপোর্টকে ভূল প্রমানিত করে ৮ ই সেপ্টেম্বরের মাত্র ৩ মাসের মাথায় অর্থ্যাৎ ১৬ ই জানুয়ারী ১৯৭৯ মাত্র এক দিনের মাথায় গন-অভ্যূত্থানে রাজ শাহ পাহলভীর পতন হয় ।
     রাজা শাহ পাহলভীর পতনের পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার । এতদিনে তাকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্যকারী এবং যাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সমস্ত শাসন আমাল কাজ করেছেন সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় । পরবর্তীতে তিনি ইতালী যান এবং ইতালীর সরকার তাকে অসম্মান করে বের করে দেয়। পরে তিনি তার বিমান নিয়ে পানামায় যান । পানামার সরকারও তাকে গ্রহন করে না । অনেক দেন দরবারের পর মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তাকে মিশরে ঢোকার অনুমতি দেয় । তার পিছনে অবশ্য কারনও ছিল । কেননা শাহের প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া ছিলেন মিসরের প্রয়াত এবং ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ ফারুকের বোন । মিশরবাসীরা বরাবরই রাজ পরিবারের উপর শ্রদ্ধা রাখত । সুতরাং মিসরের রাজকন্যার স্বামী ভিক্ষুকের মত দেশে দেশে আশ্রয় ভিক্ষা করে বেড়াবে সেটা মিশরবাসীর ঐতিহ্যে আঘাত করে ।
    অবশেষে অনেক গ্লানীসহ্য করে ১৯৮০ সালের ২৭ শে জুলাই মরনব্যাধি কান্সারে আক্রান্ত অবস্থায় এ অত্যাচারী শাসক মৃত্যুবরণ করেন । আজও বিশ্ব মুসলিম তার নাম উচ্চারন করার সময় ঘৃণার সবটুকু মাত্রা প্রয়োগ করে তার নাম উচ্চারন করে । 
   ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রান পুরুষ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী । বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে সরকারও তাদের বিদেশী প্রভূদের পরিকল্পনার নিখুঁত ছক একেঁছে এদেশের মানুষের কপালে । ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্মকে করা হয়েছে উপেক্ষিত । ধর্ম বিরোধী একের পর এক আইন পাস করা হয়েছে সংসদে । নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুসলমানদের  ধর্মীয় বিচারিক ব্যবস্থা ফতোয়াকে । সংবিধান থেকে তুলে দেয়া হয়েছে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস । পরবর্তীতে গন-আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হলেও কাযর্কর করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা । শতকরা ৯০ ই শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এ ভূ-খন্ডে ধর্ম নিরপেক্ষ আইন পাস করা গোটা মুসলিমদেরকে অপমান করার শামিল । সরকার একই রুমের এক কোনে নামাজ পড়ার জন্য জায়নামায বিছিয়ে রেখে অন্য কোনে মদ-জুয়ার আসর বসানোর ব্যবস্থা করছে । বাংলাদেশের মানুষের একটি বৃহৎ অংশ আলেমদের আজ অপমানের সীমা নাই । দাড়ি , টুপি ও জুব্বা পরিহিত মানুষদের অবস্থা রাজা শাহ পাহলভীল শাসনামলের আলেমদের অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি আল্লাহ প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ টুপিকে কুকুরের মাথায় পড়ানো হয়েছে । মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন মাজীদ পোড়ানো হয়েছে । মসজিদে নামায আদায়রত মুসল্লিদের উপর গুলি চালানো হয়েছে । মসজিদে তালা বদ্ধ করে রাখা হয়েছে । হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ব্যঙ্গ ছাপা হলেও সরকার তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি । মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুরবানীকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে এক কুলাঙ্গার বাংলাদেশের বিচারালয়ে আবেদন করতে যাওয়ার পর তাকে পুলিশ প্রহরায় বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে । নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে । মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাসকে এমন ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে মাদ্রাসা থেকে প্রকৃত আলেম হয়ে কেউ বের হতে পারবে না । ধর্মপ্রান মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পড়ার প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নি । বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে আলেমদের জেল জরিমানার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে ।
     মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের শাসক রাজশাহ পাহলভীর পতনের জন্য আয়াতুল্লাহ খোমেনী যে ভূমিকা পালন করেছিল বাংলাদেশের শাসকদের অপসারণে সেই একই ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের সু-প্রসিদ্ধ আলেম , শত আলেমের গর্বিত উস্তাদ হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ-আহমদ শফী সাহেব । হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে বাংলাদেশের সকল হক্কানী আলেমের সম্বনয়ে গঠিত বিশাল এক সম্প্রদায় নিয়ে তিনি প্রথমে সরকারকে কোরআন ও হাদীসের আলোকে দেশের মুসলামনদের শান্তি ও ইসলামকে তার ভাবমুর্তি নিয়ে অবস্থান করার জন্য শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবী পেশ করেন । সরকার প্রথম দিকে এ দাবীগুলো মানার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সেগুলোকে মানা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় । এ জন্য ফুঁসে উঠতে থাকে বাংলাদেশের আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর আন্দোলনের আদলে সমাবেশের ডাক দেন বাংলাদেশের রাজধানী শহরের বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে । চলতি বছরের ৫ ই মে চলে এ সমাবেশ । সরকারী বাহিনী ও সরকারী সমর্থক কর্মীদের সাথে ‍দিনব্যাপী সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতাকর্মী শাহাদাৎ বরণ করেন । দিনের এ সংঘর্ষই শেষ নয় ৫ই এপ্রিল দিনগরিয়ে রাত হলে বিশ্ববাসী স্বাক্ষী হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের । রাত ৩.৩০ মিনিটের সময় সরকারী বাহিন ক্রাকডাউনের মাধ্যমে হেফাজতের সমর্থক , নেতা ও কর্মীদের উপর ল্যাম্পপোষ্ট বন্ধ করে নির্বিচারে গুলি চালায় । ভয়াল সে রাতে কতলোক মারা গিয়েছিল তার সঠিক হিসাব আজও পাওয়া যায়নি । তবে বিশ্ব মিডিয়ার মতে এ সংখ্যা নিতান্তই কম নয় । বাংলাদেশের মানবতাবাদী সংস্থা অধিকার প্রকাশিত এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে হেফাজতের ওই সমাবেশে সরকারী তান্ডবে যারা মারা গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে ২০১ জনের পূর্ণ পরিচয় তাদের কাছে আছে ।

    হেফাজতের এ বিশাল আন্দোলনকে দমন করে সরকার ভেবেছিল হেফাজত সরকারে বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে পুনরায় দাঁড়াতে পারবে না । তবে হেফাজতে ইসলাম সরকারী মন্ত্রীদের ভাষন অনুযায়ী লেজগুটিয়ে বসে থাকে নি । তারা আবারও একতাবদ্ধ হয়ে ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে । প্রথম আন্দোলনের বিজয়ের সোপান রচনাকারী দলের দীর্ঘ ৯ মাস ২০ দিন পরের আন্দোলনে তাদের কি পরিনতি হবে বা সরকারের কোন অবস্থার মুখোমূখি হবে সেটা ২৪ ঘন্টা পরেই জানা যাবে । তবে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর দলের মত আল্লাম শফী সাহেবের দল বিজয়ের হাসি হাসতে পারুক বা না পারুক তারা হেফাজতের উত্থানে চিন্তিত হয়ে পড়েছে সেটা নির্ধিদ্বায় বলা যায় । সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা জানিয়েছেন ২৪শে ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া হবে না । সরকারের কথা রাখতে ডি এম পি হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেয় নি । গতকাল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর এবং ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবকে র্যাব সদস্যরা আটক করে হেফাজতে ইসলামের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে । অবশ্য র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কাসেমী সাহেবকে গেফতার করা হয়নি । কিছু তথ্য জানার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে । র্যাব তাদের কথানুযায়ী কাসেমী সাহবকে ছেড়েও দিয়েছে । অপরদিকে আল্লামা শফী সাহেব জানিয়েছেন সরকার যদি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করে তবে হেফাজতে ইসলামের রক্তের বিনিময়ে হলেও সমাবেশ সফল করা হবে । পাল্টা-পাল্টি বক্তৃতার কারনে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু হয়েছে । জয় পরাজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মত শফী সাহেবের নিয়তি হলে জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন অনেকটা নিশ্চিত ।  

লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক ।
সরকারী বি এম কলেজ , বরিশাল ।

No comments:

Post a Comment