Monday, April 7, 2014


বাংলায় সীরাত সাহিত্যের জনক মাসিক মদীনা 

সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী : মানুষ মরণশীল, কেউ অমর নন। প্রত্যেকেরই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে না-ফেরার দেশে। যারা চলে যায় তারা কেউ ফিরে আসে না। মানুষের কর্মই জীবন। সু-মহৎ কর্মের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে মানব হৃদয়ে। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে দুনিয়ার জিন্দেগীতে মানব সন্তান যেসব মহৎ কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, তা দিয়েই তাকে মূল্যায়ন করা হয়। আমাদের সমাজের প্রথা সিদ্ধ একটি নিয়ম হল, জ্ঞানী-গুণী কোন একজন মানুষের মৃত্যুর পরে আমরা তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করি। শোক সভা ও স্মৃতি চারণের পশরা মেলি। বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে মরণোত্তর পুরস্কার দেয়া হয়। গুণীজনের মৃত্যুর পর আমরা আর যত কিছুই করি ঐ মৃত লোকটি কিন্তু শরীক হতে পারে না। অথচ তাঁর জীবদ্দশায় যদি তাকে মূল্যায়ন করা হতো তাহলে তিনি নিজেও এ থেকে আরো উৎসাহ-অনুপ্রেরণা লাভ করতেন। আরো বেশী উপকৃত হতো দেশ ও জাতি। যে দেশ ও সমাজ গুণীজনের সম্মান দিতে জানে না, সে সমাজে গুণীজন জন্ম নেয়না। মানুষকে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবদ্দশায় পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ মৃত্যুর পর পুরস্কার পেলে সেটা যেমন সে জানলো না বা উপলব্ধি করতে পারলো না, তেমনি জীবিত অবস্থায় পুরস্কার দিলে তা মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।

বই হল জ্ঞানের আধার, যুগযুগ ধরে মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের পাতায়। অতীতের মনীষীদের সীমাহীন জ্ঞান ভান্ডারের পরিচয় লাভের জন্য বই হলো সর্বোত্তম মাধ্যম। মানুষ তার সাধনার ফল বিধৃত রেখে গেছে বইয়ের পাতায়। মানব জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে বইয়ের মধ্যে। ভবিষ্যতেও মানুষ একদিন এই বইয়ের মাধ্যমে তার অতীতকে জানবে। জ্ঞান আহরণে বইয়ের বিকল্প নেই। এই বইয়ের পাতার কালো অক্ষরে অমর হয়ে আছে মানুষের আত্মার চিরন্তন দ্যুতি। সারকথা অতীতকে জানতে হলে বই-ই একমাত্র সম্বল। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান হলেন এই বইয়ের জগতে এক স্বপ্নদ্রষ্টা, নির্মাতা। বাংলা ভাষায় ইসলামী পঠন-পাঠন সামগ্রীর চাহিদা পূরণে মাসিক মদীনা সম্পাদকের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। সাহিত্য সাংবাদিকতায় আলেম সমাজকে উৎসাহিত করতে সর্বদা ফিকির করেন, তরুণ প্রজন্মের আলেমদের সর্বতোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। সংবাদপত্র জগতে প্রকাশনা, পরিচালনা ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি যে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তা এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পবিত্র তাফসিরে মারেফুল কোরআনসহ তিনি ১০৫টি গ্রন্থ অনুবাদ/রচনা করেন। মাতৃভাষায় সীরাত সাহিত্যেও যে অবদান রেখেছেন, তা বিরল। বলতে গেলে তিনি বাংলায় সীরাত চর্চার পথিকৃৎ।

মৃত্যুর পর যেহেতু কেউ নতুন করে কোন যোগ্যতা অর্জন করে না, যেটুকু যোগ্যতা তা তো মৃত্যুর আগেই অর্জিত। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা চরিত্রবান ও দেশাত্মবোধে অনবদ্য খ্যাতি অর্জনকারীদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করা উচিত। সমাজসেবা, শিক্ষা, ধর্মপ্রচার, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা তথা বাংলাভাষায় ইসলামী সাহিত্যের ব্যাপক চর্চা, প্রচার প্রসারে যিনি নিজস্ব পরিমন্ডল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এমনি একজন জ্ঞান তাপস, গুণীজন হলেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। দেশ ও জাতির কল্যাণে দীর্ঘ অর্ধশতাব্দিব্যাপী তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যুক্তির আলোকে বিচার করলে নিঃসন্দেহে মূল্যায়নের মানদন্ডে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ কৃতী সন্তান। মাতৃভাষায় ইসলামী পঠন-পাঠনে তার অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি সময়ের দাবি। বাংলাভাষা ভাষীদের মধ্যে সীরাত চর্চার বিরল নজীর তিনি স্থাপন করেছেন। তার লিখিত, অনূদিত গ্রন্থাবলী মুসলিম মিল্লাতের জন্য (আকর) লাইফ গাইড হয়ে থাকবে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বঙ্গানুবাদ তার জীবনের সাফল্যের এক মাইলফলক। এছাড়া দেশের প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা ‘মাসিক মদীনা'র মাধ্যমে মাতৃভাষায় দ্বীন ইসলাম প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সকল মহলের নিকট একজন পরিচিত মুখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি এদেশের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত। ইসলামের মননশীল ও সাবলীল উপস্থাপনা এবং খেদমতে খালক'র তথা জনকল্যাণের জন্যও তিনি স্বীয় কর্মগুণেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। আমাদের দেশে অনেক লোকই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এবং প্রতি বছরই পাচ্ছেন। নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে যোগ্য এবং দেশ-জাতির জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে যদি জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয় তাহলে মাসিক মদীনা সম্পাদক, বহুগ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা সময়ের দাবী। মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আকরম খাঁ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উত্তরসুরী হিসেবেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান জাতীয় পর্যায়ে বহুবিধ কর্মকান্ডে অবদান রেখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমী ছাড়া আরো যে ক'টি প্রতিষ্ঠান প্রতি বছরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে থাকে, এসব পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে যেন কোন কারসাজির বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ না ওঠে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। গুণীজনের কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তার জীবদ্দশায় পুরস্কার দেয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে দল ও মতের উর্ধ্বে উঠতে হবে, গুণী ব্যক্তি কোন দলের, তার আদর্শ কি এসব না দেখে তার কর্মের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। আশার কথা হল মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে ‘জালালাবাদ স্বর্ণ পদক' প্রদান করছে সিলেটের জালালাবাদ লেখক ফোরাম। ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ সিলেটবাসীর পক্ষে মাওলানা খানের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও আদর্শ আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মূল্যায়নের মান দন্ডে বাংলার এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ এক কৃতী সন্তান হিসেবে নিজেই নিজের স্থান করে নিয়েছেন। ইতিহাস কারো জন্যে স্থান করে দিতে অপেক্ষা করে না অথবা জায়গা ফাঁক রাখে না। স্বীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমেই ইতিহাসে স্থান করে নিতে হয়। বাংলা ইসলামী সাহিত্যের দিকপাল-সাম্রাজ্যবাদের মোকাবিলায় ইসলামী চেতনার বিকাশ ঘটানোর মহানায়ক, বাংলায় সীরাত সাহিত্যের স্থপতি মোতামারে আলম আল-ইসলামী বাংলাদেশের সভাপতি এবং বিশ্ব মুসলিম লীগ ‘রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামী'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রধান, বাদশাহ ফাহাদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প মদীনা মুনাওয়ারাহ সৌদিআরব কর্তৃক মুদ্রিত তাফসীরে মারেফুল কোরআন এর বাংলা অনুবাদক, মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সুবিশাল কর্মকান্ডের মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর সামগ্রিক জীবনকে সামনে রেখে বিশাল গ্রন্থ প্রণয়ন আবশ্যক। আমাদের দেশের অন্যান্য আলেম-উলামা, পীর মাশায়েখ, নেতা-নেত্রীরা সাধারণত নিজের এলাকাতেই প্রসিদ্ধ লাভকরে থাকেন কিন্তু আমাদের আলোচ্য মহান এই ব্যক্তিত্ব এর ব্যতিক্রম। দেশের সীমানা পেরিয়ে ও তাঁর অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত রয়েছেন। মাসিক মদীনা সম্পাদক মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একজন দরদী অভিভাবক, চিন্তাবিদ, মহান ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান আমল থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত সংঘটিত প্রতিটি ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী মহাসম্মেলনের অন্যতম নেতা ও বক্তা হিসেবে তাঁকে প্রথম সারিতেই আমরা দেখেছি।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ইসলামী রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। নেতৃত্বের পালাবদলে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখানো পদের জন্য রাজনীতি করেননি। এই সত্যটি সচেতন মহল নিশ্চয় অকপটে স্বীকার করবেন। ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তের রাজনীতি থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে।

ষাটের দশকের শুরু থেকে নিয়ে এই বৃদ্ধবয়সে এদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাঁর সুদক্ষ লক্ষণীয়। প্রথম তিনি হযরত মাওলানা আতহার আলী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আসীন ছিলেন এবং পরবর্তীতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে জড়িত হয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্রের জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যান ও জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বিগত শতাব্দীর হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদের (রঃ) জেহাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতার উপর এ শতাব্দীর প্রথম দশকে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (র) (জমিয়তের) এ সংগঠনের গোড়া পত্তন করেন। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে জমিয়ত তার লক্ষ্য পথে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথেই অগ্রসর হয়েছে। জমিয়ত কর্মীরা সমকালীন প্রতিটি ফেতনার মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে। একথা সর্বজনবিদিত যে জমিয়ত এদেশের সর্বাপেক্ষা (পুরাতন) প্রাচীন ইসলামী সংগঠন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে তিনি যেভাবে জড়িত হলেন, তাঁর ভাষায় ঃ জমিয়ত নেতা শায়খুল হাদীস শামসুদ্দীন কাসেমী সাহেবের মাধ্যমেই আমি কুতবে জামান হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী এবং মুফতি মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাথে জড়িত হয়েছিলাম। দীর্ঘ তিন দশক জমিয়তের ব্যাপারে আমরা (কাসেমী সাহেব ও খান সাহেব) কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে সফর করেছি। দ্বীন-ধর্মের মর্যাদা রক্ষার প্রতিটি ময়দানে সক্রিয় থেকে কাজ করেছি। ফলে কাসেমী (র) এর সাথে আমার এত স্মৃতি রয়েছে যা স্বল্প পরিসরে ব্যক্ত করা অচিন্তনীয়।’’ জনাব খান স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, ‘‘১৯৬২ সালের ১ বৈশাখ পূর্বাঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী টর্নেডো হয়েছিল সেই টর্নেডো বিধ্বস্ত জনপদগুলোতে আমরা গিয়েছিলাম কিছু চিড়া-গুড় নিয়ে। দলনেতা ছিলাম আমি, কাসেমী সাহেব সহকর্মী। দলে ছিলাম ছয় জন। প্রত্যেকেরই মাথায় একটি চিড়ার বস্তা, কাঁধে ঝুলানো গুড় ভর্তি থলে। পায়ে হাঁটা গ্রামের পথে এই বোঝা বয়ে আমরা সকাল দশটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘুরেছিলাম। ফেরার পথে ক্ষুধার ক্লান্তিতে পা চলছিল না।’’

১৯৬৬ সালের ১৬ই মার্চ নবাব বাড়ীর আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব পাক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠন করা হয়। এ অধিবেশনে আগমন করেছিলেন কায়েদে জমিয়ত মুফতি মাহমুদ (র), হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী (র), মাওলানা গোলাম গৌছ হাজারভী (রঃ) ও সৈয়দ গুল বাদশাহ (রঃ) প্রমুখ আধ্যাত্মিক জ্ঞানে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। উক্ত অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (১৯০০-২০০১)কে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে তখন মাওলানা খান জমিয়তে যোগদান না করলেও এই অধিবেশনের মেহমানদের অবস্থানের ব্যবস্থা করে সহযোগিতা করেন এবং পূর্ব পাক জমিয়তের কমিটি গঠনের পর মরহুম কাসেমীর সাথে জনাব খান সাংগঠনিক কাজে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করেন। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাবেক সভাপতি, মাসিক আল-ফারুকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব মাওলানা আশরাফ আলী শায়খে বিশ্বনাথী (১৯২৮-২০০৫) ‘‘জমিয়ত পরিচিতি’’ নামক বইয়ে এ প্রসংগে বলেন, ‘‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠনের পর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব ও মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী সাহেব সাংগঠনিক কাজে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন। এমতাবস্থায় নাজিমে উমুমী (সাধারণ সম্পাদক কাসেমী সাহেব) ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে দফতরের কাজ পরিচালনা করতে লাগলেন। তখন নাজিমে দফতর ছিলেন মাওলানা আব্দুল জববার সাহেব। দফতর হতে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফরের প্রোগ্রাম হলো এবং প্রোগ্রাম অনুযায়ী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তের আমীর খলীফায়ে মদনী (রঃ) হাফিজ মাওলানা আব্দুল করিম সাহেব শায়েখে কৌড়িয়া, মাওলানা বশির আহমদ সাহেব শায়খে বাঘা (রঃ), মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী সাহেব দেশের কয়েক জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করলেন।’’

১৯৬৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারী পূর্ব পাক জমিয়তের কাউন্সিল অধিবেশন ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল সংলগ্ন ময়দানে শায়খে কৌড়িয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (রঃ)'র প্রস্তাবে পীর মুহসীন উদ্দীন আহমদ (দুদু মিয়াকে) আমিরে জমিয়ত নিযুক্ত করা হয় এবং মাওলান মুহিউদ্দীন খান কায়েদে জমিয়ত নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য যে, উক্ত অধিবেশনে শায়খে কৌড়িয়া, আব্দুল মতিন সাহেব শায়খে ফুলবাড়ী (র), শায়খুল হাদীস রিয়াছত আলী, খলীফায়ে মদনী হযরত লুৎফুর রহমান সাহেব শায়খে বরুণী, মোমেনশাহীর প্রবীণ জমিয়ত নেতা আল্লামা আরিফ রববানী, নেত্রকোণার মাওলানা মঞ্জুরুল হক, হযরত হাবিবুর রহমান সাহেব শায়খে রায়পুরী, মুফাজ্জল হুসেন বানিয়াচংগী, খলীফায়ে মদনী শায়খ আঃ গফফার মামরখানী, কুতুবে সুনামগঞ্জ আল্লামা আমীন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া, মাওলানা মকবুল হুসেন সাহেব হবিগঞ্জী, খলিফায়ে মদনী আব্দুল হক শায়খে গাজী নগরী, মাওলানা শফীকুল হক আকুনী, শহীদ শামসুল ইসলাম শেরপুরী সহ পাঁচ শতাধিক উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ- ১০ আসনে খেজুর গাছ প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ২৫/২৬ শে ডিসেম্বর ঢাকাস্থ পটুয়াটুলী জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় জমিয়তের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে মাওলানা আজীজুল হক সাহেব সভাপতি ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মহাসচিব নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনেই জমিয়ত নেতৃবৃন্দ তানজিমুল মাদারিস গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর ১৯৮০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা-লালকুঠি হলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ৩য় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। অত্র অধিবেশনে হযরত শায়খে কৌড়িয়া ও আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রঃ)-কে পৃষ্ঠপোষক করা হয় এবং বর্তমান খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা আজীজুল হক সাহেবের পদ বহাল রাখা হয় এবং মদীনা সম্পাদক জনাব খান সাহেবকে জমিয়তের সহ-সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী কেন্দ্রীয় জমিয়তের কাউন্সিলে জনাব খান কার্যনির্বাহী সভাপতি নিযুক্ত হন।

১৯৮৮ ঈসায়ী ২৮শে মার্চ ঢাকা মীরপুরস্থ জামেয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদে অনুষ্ঠিত জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। উক্ত অধিবেশনে তাঁর বড় ছেলে মুসলিম জাহান সম্পাদক মোস্তফা মঈনুদ্দীন খান জমিয়তের যুব-বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ ঈসায়ী জমিয়তের কাউন্সিল অধিবেশনে জনাব খান জমিয়তের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ১লা জুন জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মীরপুরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী সভাপতি, মুফতী ওয়াক্কাস এম,পি মহাসচিব এবং মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। গত ২০ মে ২০০৫ মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীর ইন্তিকালের পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর জমিয়তের সভাপতি হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করা হলে তিনি খলিফায়ে মদনী শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ীর নাম পেশ করেন। সর্বসম্মতিক্রমে শায়খে ইমামবাড়ী সভাপতি এবং তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর গতবছর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী সভাপতি এবং মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জমিয়তের সর্বোচ্চনীতি র্নিধারণী ফোরামের প্রধান করা হয়।

তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি কালজয়ী পত্রিকা মাসিক মদীনা সম্পাদক, মাসিক মদীনা পরিবারের গৌরবদীপ্ত আলোকবর্তিকা, সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদনা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাবেতা আলম আল ইসলামীর কাউন্সিলর, মুতামার আল আলম আল ইসলামী এর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামী মোর্চার সভাপতি, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সর্বোচ্চনীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান ।

মাওলান মুহিউদ্দীন খানের প্রতিটি লেখা, ইসলামী জ্ঞানের এক একটা রত্ন ভান্ডার। বাংলাদেশ তথা মুসলিম বিশ্বের দাওয়াত কর্মী এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরাই তাঁকে একজন পথ প্রদর্শক, মর্দে মুজাহীদ বলে মনে করেন। ১৯৯৬ সালের আগে তাকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি, কিন্তু তিনি সে সময়ই আমার ও আমার মত আরও অনেক নবীনের কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক কিংবদন্তীর নায়ক, প্রেরণার বাতিঘর। পবিত্র কোরআন-হাদীসের অবমাননাসহ ইসলাম-বিরোধী কার্যকলাপ ও তৎকালীন ইসলাম পন্থী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁর (জ্বালাময়ী বক্তৃতা) দুঃসাহসী সংগ্রামের কাহিনী নানা মুখে শুনে এবং পত্র পত্রিকায় পড়ে সর্বশেষে তাঁর সান্নিধ্যে অবস্থান করে আমি তাঁর ন্যায় নির্যাতিত মানবতার মুক্তির নিরাপোষ সংগ্রামে (ইসলামী আন্দোলনে) ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছি। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আজীবন সাহিত্য সাধনার পূর্ণ বিশ্বাসকে উপস্থাপন করেছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় নির্ভীক কলম সৈনিক মুহিউদ্দীন খান প্রায় অর্ধ শতাব্দী কাল যাবত এ দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার পরিমন্ডলে একজন সুদক্ষ শিল্পী হিসেবে বিচরণ করছেন। তিনি জীবনের শুরুতে তমুদ্দুন মজলিস ও হাকিম আজিজুল ইসলামের সম্পাদনাধীন সাপ্তাহিক নেজামে ইসলাম পত্রিকার সাথে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

দেশ ও জাতির চরম দুর্যোগ মুহুর্তে মুসলিম সংস্কৃতির সা©র্র্বক লালন ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৬১ ঈসায়ীর মার্চে মাসিক মদীনা প্রকাশ করেন। জনাব খান তাঁর ক্ষুরধার ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব লেখনীর তেজস্বী ভাষা এবং মিনতি বলিষ্ঠভাবে প্রভাব ফেলেছে নিষ্ক্রিয় আদম সন্তানদের সক্রিয়করণে। গণমানুষের চেতনাকে বিলীন করার লক্ষ্যে তাঁর প্রকাশিত মাসিক মদীনা পত্রিকাকে বন্ধের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। সরকারও কতিপয় চক্রান্তকারী মহল সম্পাদক মাওলানা খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করে। মাসিক মদীনায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয়তে এনজিওদের বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড সম্পর্কে বক্তব্য প্রকাশের কারণে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছিল। মানহানি সংক্রান্ত একটি মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষে ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আঃ হান্নান এক আদেশে মাওলানা খানকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন।

আজকের ইসলামিক ফাউন্ডেশন (পূর্ব নাম-ইসলামী একাডেমী) এবং বাংলাদেশের বেসরকারী বা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ‘‘বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়া’’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। দেশের আলেম সমাজ, বিশেষতঃ কওমী মাদরাসাগুলির হালচিত্র উন্নয়ন এবং এই শিক্ষা ধারাটিকে যুগ-চাহিদার উপযোগী করে তোলার বিষয়ে তিনি সবসময় চিন্তা করতেন। এসম্পর্কে সাপ্তাহিক জমিয়ত পত্রিকার ৬ষ্ঠ বর্ষ, ১৪তম সংখ্যায় তিনি লিখেন, জমিয়তে ওলামার অফিসে বসে মাওলানা রেজাউল করীম ইসলামাবাদীর মুখে বেফাক গঠনের সংকল্পের কথাশুনে অন্তত পনেরো বছর আগের মুরুববীগণের আকাংখাটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পেলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গেই সর্ব প্রকার সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করে ফেললাম। তখনকার সময়টা ছিল আমাদের জন্য বড়ই প্রতিকূল। জাতীয় ভিত্তিতে একটা সম্মেলন আয়োজনের ব্যয়ভারের সংকুলান ছিল আমাদের ন্যায় কর্মীদের পক্ষে একটা বিরাট বোঝা। কিন্তু মাওলানা ইসলামাবাদী হিম্মত করলেন। লালবাগের শায়েস্তা খান হল ভাড়া করা হলো।’’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জিরি ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ও জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়ার প্রাক্তন মুহাদ্দেস প্রিন্সিপাল মাওলানা রেজাউল করিম ইসলামাবাদীসহ জমিয়ত নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় '৭৮ সালে শায়েস্তা খান হলের সেই সম্মেলনেই ‘বেফাক' গঠিত হয়। জামেয়া কোরআনিয়া লালবাগের সেক্রেটারি মরহুম হাজী আব্দুল ওয়াহহাব ঐ হল ভাড়ার ব্যবস্থা করলেন। ঢাকা নিবাসী জনাব আলহাজ্ব মুহাম্মদ আকীল এবং গেন্ডারিয়ার বর্ষিয়ান মুরববী হাজী কোরবান আলী সাহেব উল্লেখযোগ্য চাঁদা দিয়ে সহায়তা করলেন। জমিয়তের সেক্রেটারি জনাব মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেবের কাঁধে ন্যস্ত হল মুদ্রণজনিত যাবতীয় ব্যয়ভার। ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার বড় একটি কামরা ছিল বেফাকের তৎকালীন কার্যালয়। বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়ার প্রথম সভাপতি ছিলেন-জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়ার প্রধান হযরত মাওলানা হাজী ইউনুছ (রহ) এবং জনাব রেজাউল করীম ইসলামাবাদী ছিলেন মহাসচিব। ‘‘বেফাকুল মাদারিছিল আরাবিয়া’’ নামক সংস্থাটি আমাদের আকাবর মুরুববীগণের দীর্ঘকালের লালিত একটি মহৎ স্বপ্নের বাস্তবায়ন, আর এই বাস্তবায়ন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের উদ্যোগ। অন্য কথায় এটি জমিয়তেরই সন্তান। সময়ের সাহসী বীর সন্তান মাওলানা খান কখনো কাউকে ভয় করেননি, দমবার পাত্র নন, যখন যেখানেই গিয়েছেন সাহস ও আগ্রহের সাথে দ্বীনি কথা-বার্তা বলেছেন এবং বলে যাচ্ছেন অকুণ্ঠ চিত্তে। মাসিক মদীনার সম্পাদকীয় কলামটি এর বাস্তব প্রমাণ। তিনি গুণ-বৈশিষ্ট্য রপ্ত করেছিলেন (ছোট বেলা থেকেই) স্বীয় উস্তাদ কিংবদন্তির মহানায়ক মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রঃ) এর কাছ থেকে।

ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে তিনি জমিয়ত ছাড়াও আরও কয়েক সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চার সাবেক সভাপতি, বেফাকুল মাদারিছ বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ জাতীয় সীরাত কমিটির সভাপতি, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, চারদলীয় জোটের অন্যতম রূপকার, ইসলামী পত্রিকা পরিষদের সভাপতি, ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহবায়কসহ আরও অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা। ইসলামী আন্দোলনের বীর সিপাহসালার মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের প্রথম সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। মোটকথা জনাব মুহিউদ্দীন খান সমকালীন সকল ইসলামী আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ এই মহান ব্যক্তিত্ব বাংলা ১৩৪২ সনের ৭ই বৈশাখ রোজ শুক্রবার জুমার নামাজের আযানের সময় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী, হযরত শাহ শামসুদ্দিন তুর্ক, মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগীর স্মৃতি বিজড়িত তৎকালীন বাংলার সর্বাপেক্ষা বড় জেলা, ঐতিহ্যবাহী মোমেনশাহী জেলার গফরগাঁও উপজেলাধীন আনসার নগর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী দরাজ দীল মাওলানা খানের পিতা বিশিষ্ট সাধক পুরুষ, প্রবীণ শিক্ষাবিদ মৌলভী হাকিম আনছার উদ্দিন খান। তাঁর মাতা ধর্মপরায়ণা রমনী মোছাঃ রাবেয়া খাতুন। দাদাঃ মুন্সি তৈয়ব উদ্দিন খাঁন, দাদীর নাম কলমজান বিবি। এক বছর বয়সে তিনি দাদাকে হারান। মৌলভী আনছার উদ্দীন খাঁন, ৬ ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন। তরফের অন্যতম আউলিয়া হযরত শামসুদ্দিন তুর্ক (র) (মাজার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির কুড়িগাই নামক গ্রামে) এই মহান বুযুর্গ মাওলানা খানের মাতামহীর পূ্র্ব পুরুষ ছিলেন। তাঁর মাতামহীর পিতার নাম মুন্সী তৈয়ব উদ্দিন (র)। মরহুম মুন্সী সাহেবের সাত কন্যার সকলকেই সমকালীন বিশিষ্ট আলেমের নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠ কন্যাকে বিয়ে দিলেন বিখ্যাত ফার্সী কবি মৌলভী নজাবতুল্লাহর নিকট।

স্বীয় পিতা-মাতা এই দুই উস্তাদের পাঠশালাতেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন ১২ তখনই তার স্নেহময়ী মাতা মোছাঃ রাবেয়া খাতুন ইহধ

Friday, February 28, 2014



কার্যকরন নীতিতে মানুষ হত্যা : দায়ভার কার উপর বর্তাবে


বরিশাল বিভাগের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী বি এম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন । হঠাৎ করেই একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্রী এসে স্যারের অনুমতি না নিয়ে ক্লাসে ঢুকে , স্যারকে জিজ্ঞাসা করে-স্যার আমাদের ক্লাস শুরু হবে কবে ? স্যার প্রশ্ন শোনার আগেই খুব রেগে যান এবং ঐ ছাত্রীকে বকা-ঝকা করে ক্লাস থেকে বের করে দেন । ছাত্রীটি ক্লাস থেকে বের হওয়ার পরে স্যার একটি ছাত্রকে জিজ্ঞাস করলেন বলোতো আমি ওকে বকা দিলাম কেন ? ছাত্রটি সবিনয়ে বলল স্যার সে আপনার অনুমতি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেনি তাই । স্যার ছাত্রটির উত্তরকে সঠিক হিসেবে সত্যায়ণ করে বললেন , এটা কার্যকরন নীতির সূত্র । অর্থ্যাৎ কোন কাজের জন্য তার পিছনে কারন থাকা আবশ্যক । আমার বকার পিছনে কারন ছিল সে অনুমতি ছাড়া ক্লাসে প্রবেশ করার অপরাধ । কাকতালীয় ভাবে স্যারের ঐদিনের আলোচ্য বিষয় ছিল কার্যকরন সম্মন্ধ্য । সুতরাং স্যারের ওই দিনের ক্লাস যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়েছিল তাদের কার্যকরন সম্পর্কের সংজ্ঞা এবং উদাহরন কোনদিন ভোলার কথা নয় ।
দেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যাসন্ন । আর মাত্র ১৫ দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে দেশের ইতিহাসের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন । এ নির্বানকে ঘিরে দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে । গত কয়েকদিনে শত লোকের প্রান বিসর্জন দিতে হয়েছে । অতীতের সকল হানাহানির রেকর্ড ভেঙ্গে সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেয়া আবশ্যক মনে করছি । গত ২৪ অক্টোবর ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী সময়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করার দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ দিনে বাংলাদেশের মানুষের যে জান এবং মালের ক্ষতি হয়েছে তার একাংশের জরিপ তুলে ধরা হল গত ৫৫ দিনে রাজনৈতিক সংহিসতার বলি হয়েছে ১৬১ টি তাজা প্রাণ । এই ১৬১ জনের মধ্যে আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৬৪ জন । চলমান রাজনৈতিক সংহিসতায় শুধু বি,আর,টিসি বাসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা । বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ সমবায়ী কৃষকের লোকসান হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা । গত কয়দিনে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার চা শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা । প্রতি বস্তা সারের মূল্য বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত । যার কারনে ভবিষ্যতে উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্র মারাত্মক হুমকির মূখে পড়বে । আর এসকল ক্ষতির প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির উপর । যার কারনে দেশের দোদ্যুল্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে । এ সকল ক্ষতির প্রধান শিকার হচ্ছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ । চলমান হরতাল ও অবরোধের কারনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের শিক্ষাক্ষাত দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । সকল কিছুর পরেও পেট্রোল বোমার মত মারাত্মক মরানাস্ত্রের ভয়াবহ সহিংসতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ । গত ৫৪ দিনের তিন দফা অবরোধে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে , বাংলাদেশের যোগাযেগের অন্যমত বৃহৎ মাধ্যম রেল শিল্পে । এছাড়াও তিন দফা অবরোধ ও কয়েকদফার হরতালে দেশের অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম , শিল্প , শিক্ষা এবং ব্যবসাসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা । যে ক্ষতি পূরণ করতে গিয়ে ভবিষ্যতে দেশের অর্থণৈতিক অবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । দেশের এ অবস্থা জাতিকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভয়াবহ অবস্থার কথা । সরকারী দল বিরোধী দলকে এবং বিরোধীদল সরকারী দলের দিকে আঙুল উঁচিতে দায়ভার চাপাতে চাইছে । এসকল নাশকতা থেকে দেশকে রক্ষা করার মত পর্যপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা বাহীনিগুলো । দেশের কিছু কিছু স্থানে নিরাপত্তা বাহীনির বিপরীতে দখল নিয়েছে হরতাল অবরোধের সমর্থক গোষ্ঠী । যার কারনে গনতন্ত্র পদ-দলিত হচ্ছে । সরকারী দল এবং বিরোধীদল যদি দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়ে সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয় তবে দেশের যে টুকু সম্ভাবনা অবশিষ্ট আছে সে টুকুও অবশিষ্ট থাকবেনা । আসুন একনজরে দেখে নেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি । দশমজাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবিধানিক সর্বদলীয় সরকার সকল বাধা পেরিয়ে আস্তে আস্তে তাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলছে । বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট নিবন্ধিত ৪০ টি রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে ১৬ টি দলকে নিয়ে গঠিত হয়েছে সর্বদলীয় সরকার । বাংলাদেশের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৫৪ টি আসনের মনোনীত প্রার্থীরা ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদন্ধিতায় বিজয়ী হয়েছেন । সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে মাত্র ১৪৬ টি আসনে নির্বাচন দিতে হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের পাঁচটি জেলার সকল প্রার্থী বিনা প্রতিদন্ধিতায় বিজয়ী হয়েছে । ১৫ জেলায় ১ টি করে আসনে নির্বাচন দিতে হবে কেননা অন্যান্যা আসনের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদন্ধিতায় জয়ী আংশিক আসনে ভোট হবে এমন জেলার সংখ্যা ১০ টি । অবশিষ্ট ১২ টি জেলার সকল আসনেই ভোট হবে । সর্বশেষ সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভোটার সংখ্যা মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ । এদের মধ্য থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ কোটি ৩৬ লাখ লোক ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে বাকী ভোটারদের মধ্য থেকে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ভোটার ভোট দিতে পারেব না কেননা তাদের আসন সমূহের প্রার্থীরা তাদের ভোট ছাড়াই দেশের সংসদ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ৩০০ টি সংসদীয় আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫৮৩ জন (যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন) । দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন ৩৭৪ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করেছেন ২০৯ জন । একটি আসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন (খাগড়াছড়িতে)।
দেশের চলমান নির্বাচন থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে বহির্বিশ্ব । অতীত নির্বাচনে যে সকল দেশ এবং সংস্থা থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষন করার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠানো হত , তারা বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষকদল পাঠাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে । অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যেত প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগনের আশা-আকাঙ্খার দিকে লক্ষ রেখে জনগনের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ণ করত । কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনো কোন দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রনয়ন করে নি । বিশ্বের অন্যতম সংবাদ সংস্থা বিবিসি এ নির্বাচনকে আনুষ্ঠানিকতার নির্বাচন হিসেবে দেখছে । তারা জানিয়েছে , বাংলাদেশের অতীতের নির্বাচনে যেমন উচ্ছ্বাস থাকত সে রকম উচ্ছ্বাস এ নির্বাচনে নাই । তবে উত্তেজনা আছে । সেটা সংঘর্ষের উত্তেজনা ।
চলমান আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাদরে অভিব্যক্তি দেখে অনেকেই মত দিয়েছেন সরকার পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে । তবুও তাদের প্রেসটিজ বাঁচানোর জন্য নামকাওয়াস্তের একটি নির্বাচন দিতে হবে । মাননীয় শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করা হবে তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী যেমনটা খালেদা জিয়াকে করা হয় । ১৯৯৬ সালের মত আরেকটা নির্বাচন ২০১৪ সালে হতে যাচ্ছে । বাংলাদেশের কিছু আনাড়ি ব্যক্তি তাদের নামের পিছনে সাবেক সাংসদ লাগানোর সুযোগ পাবে । রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি কিংবা জানের ক্ষতির দিকে কারো কোন ভ্রক্ষেপ নেই ।
দেশের চলমান পরিস্থিতির জন্য বি এন পি পন্থীরা আওয়ামীলীগকে এবং আওয়ামী পন্থীরা বি এন পিকে দোষী সাব্যস্ত করছে । দোষটা আসলে কার সে ব্যাপারের পরিমাপক কোন নিক্তি কারো কাছে নাই । দেশে যে কয়জন নিরপেক্ষ ব্যক্তি অবশিষ্ট আছেন তারা গ্রেফতার আতঙ্কে মূখ খুলতে সাহস পাননা । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ৪৩ বছরে মাত্র ৪ বার সামরিক উত্থান ঘটলেও বাকী নয়বার গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । এসকল নির্বাচনের প্রত্যেক বারই নির্দলীয় সরকার নির্বাচন কালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছে । শুধু মাত্র ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনমতকে উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে প্রহসন মূলক নির্বাচন দেয় । কথিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২১ দিন রাষ্ট্র পরিচালনা করে । তৎকালীন সময়ের বিরোধীদল আওয়ামীলীগ জামাআতে ইসলামীকে নিয়ে ব্যাপক আন্দোলনে মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সরকাররে পতন নিশ্চিত করে । সে সময়ের আন্দোলনেও অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । তৎকালীন সময়ে বেগম খালেদা জিয়াই তার ক্ষমতালিপসু সিদ্ধান্তের কারনে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার নিতে বাধ্য । কেননা আওয়ামীলীগ এবং জামাআতে ইসলামী তাদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিল সেটা গনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন । সে আন্দোলনে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার অবশ্যই খালেদা জিয়াকে নিতে হবে । যেহেতু শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যে কার্য করেছেন সে কার্যের পিছনের কারন ছিল বেগম খালেদা জিয়ার ভূল সিদ্ধান্ত ।
মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহন করে । সে ইতিহাসটা যত নিকটবর্তী হয় তার প্রভাবও শিক্ষায় তত বেশি আলোকপাত করে । মাত্র ১৭ বছর আগের ইতিহাস শেখ হাসিনা এত সহজে ভূলে গেলেন কেমনে ? তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন , তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের ইতিবৃত্ত । তাতে তিনি যে বিষয়টাকে হাইলাইট করেছেন সেটা হল সামরিক বাহিনী কর্তৃক অপমান ও জেল । বাংলাদেশের মানুষ কোনদিনও চাইবেনা গনতান্ত্রিক এ দেশে সামরিক শাসন আসুক । দেশের স্বার্থ বিবেচনায় আপনাদেরও সেটা চাইবার কথা নয় । আপনাদের দুই নেত্রীর শাসনকাল যেমন হওয়ার কথা ছিল , আপনারা তেমনি ভাবে শাসনকার্য চালান না । জনগনের কাছে আপনাদের কাজের কৈফিয়ত দেয়ার একটা বিয়য় থাকলেও সেটা গনতন্ত্রের মানসকন্যাদ্বয় যেন ভূলেই যান । সেক্ষেত্রে জনগন অনুপায় হয়ে সামরিক শাসন কামনা করে । আপনারাও ভয়ে থাকেন হয়ত সামরিক শাসকদের কাছে আপনাদের জবাবদীহি করতে হবে । অবশেসে সে পথটুকুও বন্ধ করে দিলেন । জনগনের যাওয়ার শেষ আশ্রয়টুকুও শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখলেন না । এখন দুইজন মিলে যা ইচ্ছা তাই করবেন । আপনাদের আর পায় কে ? মানুষ হত্যা করবেন , দেশের সম্পদ ধ্বংস করবেন । কৈফিয়ত না দিতে হলে যা ইচ্ছা তাই করা যায় । ভৌগলিক কারনেই আমাদের নীতি নৈতিকতা একটু কম । সকল কিছুর পরেও কার্যকরন সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারবেন কি ? কার্যকরনের সূত্রধরেই সকল কিছুর দায়ভার যার উপর বর্তাবে তাকেই এর জন্য দায়ী করা হবে । পরবর্তীতে বেঁচে থাকলে জবাবদীহিও করতে হবে
লেখক : রাজু আহমেদ
শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক
সরকারী বি এম কলেজ , বরিশাল

শাহ আহমেদ শাফি


আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকায় আহমদ শফী : পরিবর্তন কি সুনিশ্চিত
December 23, 2013 at 5:30pm
     বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগের প্রথমার্ধে ইরানে সংঘটিত বিপ্লবের কথা অনেকেরই অজানা নয়। বিদেশী প্রভূদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আধুনিক ইরানের সর্বশেষ শাসক সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর পতন ঘটে । বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সেদিন আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে ছিল ইরানের দিকে । আধুনিক ইরানের যে কয়জন শাসক ইরানের উন্নয়ন করেছিল তাদের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভী সবার শীর্ষে । ইরানের শাসন আমলের মধ্যে যে সময়গুলোকে সোনালী সময় হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয় তার মধ্যে রেজা শাহ পাহলভীর শাসন আমল অন্যতম । রেজা শাহ পাহলভী এবং তার সভাসদ বৃন্দ ইরানের এমন কোন স্থান বাকী রাখেন নি যেখানে তাদের উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করে নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রায় ইরানকে রেজা শাহ পাহলভী যে ভাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সহায়তা করে সে পদ্ধতি দেখে গোটা বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল । বিদেশী প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার শর্তে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করলেও তার শাসন আমলের শুরুর দিকের কার্যকলাপ তাকে ইরানের জনগনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয় । জনগনের সে দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রেজা শাহ পাহলভী ধীরে ধীরে তার বাসনা প্রতিষ্ঠার পথে পা রাখেন ।
    ১৯৫৩ সালে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে বেশ কয়েক বছর তিনি অত্যন্ত নীতি নৈতিকতার সাথে তার রাজকার্য পরিচালনা করেন । রাজা শাহ পাহলভীর পূর্ব পুরুষের শাসনামল দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর ধরে চলে আসছিল । রাজা শাহ পাহলভীর পূর্ব পূরুষ মহামতি সাইরাস থেকে তাদের সাহসী ও শক্তিশালী শাসনামল চলে আসেছে । যে কারনে রেজা শাহ পাহলভীর রক্ত অন্যান্য শাসকদের রক্তের চেয়ে বেশী তেজস্বী ছিল । বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে যে কয়জন শাসক বিশ্বের বুকে তাদের সাহসিকতার জন্য পরিচিত পেয়েছিল তাদের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভী অন্যতম । বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসকদের মধ্যে রাষ্ট্রের সিংহভাগ ক্ষমতা শাসকদের হাতে ন্যস্ত থাকলেও সভাসদগনের কাছেও কিছু ক্ষমতা ন্যায্য থাকত । এক্ষেত্রে রেজা শাহ পাহলভী ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম । তার কাছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা এমনকি রাষ্ট্রের চরম ও চুড়ান্ত ক্ষমতাও ন্যস্ত ছিল ।  এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে তিনি বাকশালী মানসিকতার হয়ে ওঠেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে সাথে সাথে তাকে শিরঃচ্ছেদ বা গুলি করে হত্যা করা হত । যে কারনে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলার সাহস কেউ করত না । ১৯৫৩ সালে ক্ষমতায় উঠে আসার পর থেকে ১৯৭৯ সালে ১৬ ই জানুয়ারী পর্যন্ত রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তার হাতে ন্যস্ত ছিল । তাছাড়াও ইঙ্গ-মার্কিন বাহীনির সরাসরি মদদ পাওয়ার কারনে তিনি নিজেকে ইরানের সর্বময় ক্ষমতার মালিক মনে করতেন । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই অন্যান্য অত্যাচারী শাসকের মত সরকারী পেটোয়া পুলিশ এবং সেনা বাহীনি দ্বার রাস্তায় বা প্রকাশ্য স্থানে গুলি করে হত্যা করা হত ।
     বিশ্লেষকরা মনে করেন তার দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসন আমলে ইরানে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে কারও অবস্থান করা যুক্তি-যুক্ত ছিল না । কিন্তু বিশ্লেষকদের সে ধারনাকে ভূল প্রমান করে , তার বিরুদ্ধে জনগনের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ । প্রথমদিকে রেজা শাহ পাহলভীর শাসনের উপর জনগন খুশি থাকলেও তার কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস , আচরন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলনের কারনে জনগন তার বিরুদ্ধে চলে যায় । জনগনের এ ক্ষোভ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকলেও ১৯৭৭ সালে ব্যাপক ভাবে প্রকাশ পায় । রেজা শাহ পাহলভীর উপর মুসলিম জনগন অনেক কারনেই ক্ষেপে ছিল । তাদের সে ক্ষোভকে গতি দিয়েছিল ইসলাম বিরোধী অনেক প্রথার প্রচলন । সে সকল প্রথা পালনে রাজা শাহ পাহলভী নিষেধ না করে বরং এসব কাজ যাতে বিনা বাধাঁয় পালন করা যায় তার ব্যবস্থা করে দেন । যার ধারাবাহিকতায় ইরানের রাস্তায় রাস্তায় মদের দোকান চালু হয় । শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং শহরতলীত বিভিন্ন নাইটক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় যাতে ড্যান্স পার্টির নামে সারা রাত মদ , জুয়া ও অবাধ যৌনাচার চলে । এ অসামাজিক কাজ থেকে ইরানের খোদাভীরু লোকেরা সকাল বেলা ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে থেকে মুক্তি চেয়ে অন্যসব কাজে বের হত । 
     রেজা শাহ পাহলভীর শাসনামলে সবচেয়ে বেশি অপমান করা হয়েছে ইরানের আলেমদেরকে । তিনি নিজে ধর্মবিদ্বেষী থাকার কারনে তার অনুসারীরা তাদের কাজকে সামনের দিকে এগিযে নিতে আর কোন বাধার সম্মূখীন হয় নি । তেহরানের রাস্তায় কোন দাঁড়ি টুপি পড়া লোক পাবলিক বাসে চড়লেই  বাসের কন্ডাক্টার বলত , আমরা কোন দাঁড়ি-টুপি পড়া লোক এবং বেশ্যাদেরকে বাসে চড়াই না । এ রকম জগন্য ভাষা দিয়ে লাঞ্ছিত করে আলেমদেরকে বাস থেকে ফেলে দেয়া হত । এছাড়াও রেজা শাহ তার সন্তানগন এবং স্ত্রী পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল । তাদের প্রত্যেকেই পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্ধ-অনূকরন করত । রাজা শাহ এবং তার স্ত্রী ইরানী সংস্কৃতি ভূলে বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং দেশী বিদেশী অনুষ্ঠানে পশ্চিমা পোশাক পরিধান করত । যেটা ইরানের ধর্মপ্রান মুসলমানদের কাছে একেবারেই অশালীন পোশাক হিসেবে চিহ্নিত ছিল । ইসলামের সাথে এরকম জনগন্যতম বেয়াদবের হাত থেকে ইরানবাসী মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে সাহয্য প্রার্থনা করত । মুসলমানদের মনের অনুভূতি উপলব্ধি করে এগিয়ে আসে ইসলামের একজন খাদেম ।  

    এতদিনের সে আকঙ্খিত দিন ইরানের মুসলমানদেরকে হাতছানি দিতে শুরু করে  ইরানের একজন কম পরিচিত আলেম আয়াতুল্লাহ খোমেনী অনুধাবন করেন সাধারন মুসলমানদের মনের বাসনা । শিয়াদের শহর নাযাফে তিনি রাজা শাহ পাহলভী বিরোধী সমাবেশ আহ্বান করেন । সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে এ সমাবেশে জড়ো হন লাখ লাখ মানুষ । রাজা শাহ পাহলভী এবং তার অনুষদ বর্গ প্রথমদিকে এ সমাবেশের ব্যাপারে মাথা ঘামায় না । কিন্তু দিনের পর দিন পরিস্থিতির রং বদলাতে শুরু করে । ইরানের রাস্তায় নেমে আসে অগনিত লোক । অবশেষে শেষ হয় পতীক্ষার প্রহর । দিনটি ছিল শুক্রবার । সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ লোক জুমাআর নামাজ আদায় শেষে তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে । রাজা শাহ পাহলভী মুক্তির কোন পথ না পেয়ে জনগনের উপর শেষ কামড় বসায় । ইতিহাসের প্রত্যেক অত্যাচারী শাসকের মতো তিনিও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে শুরু করে । দিনটি ছিল ১৯৭৮ সালে ৮ ই সেপ্টেম্বর । রাজা শাহ পাহলভীর পেটোয়া বাহীনি সমাবেশরত বিশাল জনসমাগমের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় । এ গুলিতে অগনিত মানুষ শাহাদাৎ বরন করেন । শাহের বাহীনির নগ্ন গুলির সামনে মানুষ দাঁড়াতে না পেরে সাময়িক ছত্রভঙ্গ হয় যায় তবে সেখান থেকেই রাজা শাহ পাহলভীর পতনের দ্বার উম্মোচিত হতে শুরু করে ।
    জনগনকে ছত্রভঙ্গের পর ইরানে নিযুক্ত সিআইএর এজেন্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত সিআইএর হেডকোয়াটারে রিপোর্ট করে ৮ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর শাহের শাসনক্ষমতা এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে যে , আগামী ১০ বছরে বিরোধী পক্ষ মাথা তুলো দাঁড়াতে পারবে না। তাদের এ শক্তিশালী রিপোর্টকে ভূল প্রমানিত করে ৮ ই সেপ্টেম্বরের মাত্র ৩ মাসের মাথায় অর্থ্যাৎ ১৬ ই জানুয়ারী ১৯৭৯ মাত্র এক দিনের মাথায় গন-অভ্যূত্থানে রাজ শাহ পাহলভীর পতন হয় ।
     রাজা শাহ পাহলভীর পতনের পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার । এতদিনে তাকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্যকারী এবং যাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সমস্ত শাসন আমাল কাজ করেছেন সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় । পরবর্তীতে তিনি ইতালী যান এবং ইতালীর সরকার তাকে অসম্মান করে বের করে দেয়। পরে তিনি তার বিমান নিয়ে পানামায় যান । পানামার সরকারও তাকে গ্রহন করে না । অনেক দেন দরবারের পর মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তাকে মিশরে ঢোকার অনুমতি দেয় । তার পিছনে অবশ্য কারনও ছিল । কেননা শাহের প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া ছিলেন মিসরের প্রয়াত এবং ক্ষমতাচ্যুত বাদশাহ ফারুকের বোন । মিশরবাসীরা বরাবরই রাজ পরিবারের উপর শ্রদ্ধা রাখত । সুতরাং মিসরের রাজকন্যার স্বামী ভিক্ষুকের মত দেশে দেশে আশ্রয় ভিক্ষা করে বেড়াবে সেটা মিশরবাসীর ঐতিহ্যে আঘাত করে ।
    অবশেষে অনেক গ্লানীসহ্য করে ১৯৮০ সালের ২৭ শে জুলাই মরনব্যাধি কান্সারে আক্রান্ত অবস্থায় এ অত্যাচারী শাসক মৃত্যুবরণ করেন । আজও বিশ্ব মুসলিম তার নাম উচ্চারন করার সময় ঘৃণার সবটুকু মাত্রা প্রয়োগ করে তার নাম উচ্চারন করে । 
   ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রান পুরুষ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী । বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে সরকারও তাদের বিদেশী প্রভূদের পরিকল্পনার নিখুঁত ছক একেঁছে এদেশের মানুষের কপালে । ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্মকে করা হয়েছে উপেক্ষিত । ধর্ম বিরোধী একের পর এক আইন পাস করা হয়েছে সংসদে । নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুসলমানদের  ধর্মীয় বিচারিক ব্যবস্থা ফতোয়াকে । সংবিধান থেকে তুলে দেয়া হয়েছে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস । পরবর্তীতে গন-আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হলেও কাযর্কর করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা । শতকরা ৯০ ই শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এ ভূ-খন্ডে ধর্ম নিরপেক্ষ আইন পাস করা গোটা মুসলিমদেরকে অপমান করার শামিল । সরকার একই রুমের এক কোনে নামাজ পড়ার জন্য জায়নামায বিছিয়ে রেখে অন্য কোনে মদ-জুয়ার আসর বসানোর ব্যবস্থা করছে । বাংলাদেশের মানুষের একটি বৃহৎ অংশ আলেমদের আজ অপমানের সীমা নাই । দাড়ি , টুপি ও জুব্বা পরিহিত মানুষদের অবস্থা রাজা শাহ পাহলভীল শাসনামলের আলেমদের অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি আল্লাহ প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ টুপিকে কুকুরের মাথায় পড়ানো হয়েছে । মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন মাজীদ পোড়ানো হয়েছে । মসজিদে নামায আদায়রত মুসল্লিদের উপর গুলি চালানো হয়েছে । মসজিদে তালা বদ্ধ করে রাখা হয়েছে । হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ব্যঙ্গ ছাপা হলেও সরকার তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি । মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুরবানীকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে এক কুলাঙ্গার বাংলাদেশের বিচারালয়ে আবেদন করতে যাওয়ার পর তাকে পুলিশ প্রহরায় বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে । নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে । মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাসকে এমন ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে মাদ্রাসা থেকে প্রকৃত আলেম হয়ে কেউ বের হতে পারবে না । ধর্মপ্রান মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পড়ার প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নি । বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে আলেমদের জেল জরিমানার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে ।
     মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের শাসক রাজশাহ পাহলভীর পতনের জন্য আয়াতুল্লাহ খোমেনী যে ভূমিকা পালন করেছিল বাংলাদেশের শাসকদের অপসারণে সেই একই ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের সু-প্রসিদ্ধ আলেম , শত আলেমের গর্বিত উস্তাদ হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ-আহমদ শফী সাহেব । হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে বাংলাদেশের সকল হক্কানী আলেমের সম্বনয়ে গঠিত বিশাল এক সম্প্রদায় নিয়ে তিনি প্রথমে সরকারকে কোরআন ও হাদীসের আলোকে দেশের মুসলামনদের শান্তি ও ইসলামকে তার ভাবমুর্তি নিয়ে অবস্থান করার জন্য শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবী পেশ করেন । সরকার প্রথম দিকে এ দাবীগুলো মানার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সেগুলোকে মানা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় । এ জন্য ফুঁসে উঠতে থাকে বাংলাদেশের আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর আন্দোলনের আদলে সমাবেশের ডাক দেন বাংলাদেশের রাজধানী শহরের বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে । চলতি বছরের ৫ ই মে চলে এ সমাবেশ । সরকারী বাহিনী ও সরকারী সমর্থক কর্মীদের সাথে ‍দিনব্যাপী সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতাকর্মী শাহাদাৎ বরণ করেন । দিনের এ সংঘর্ষই শেষ নয় ৫ই এপ্রিল দিনগরিয়ে রাত হলে বিশ্ববাসী স্বাক্ষী হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের । রাত ৩.৩০ মিনিটের সময় সরকারী বাহিন ক্রাকডাউনের মাধ্যমে হেফাজতের সমর্থক , নেতা ও কর্মীদের উপর ল্যাম্পপোষ্ট বন্ধ করে নির্বিচারে গুলি চালায় । ভয়াল সে রাতে কতলোক মারা গিয়েছিল তার সঠিক হিসাব আজও পাওয়া যায়নি । তবে বিশ্ব মিডিয়ার মতে এ সংখ্যা নিতান্তই কম নয় । বাংলাদেশের মানবতাবাদী সংস্থা অধিকার প্রকাশিত এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে হেফাজতের ওই সমাবেশে সরকারী তান্ডবে যারা মারা গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে ২০১ জনের পূর্ণ পরিচয় তাদের কাছে আছে ।

    হেফাজতের এ বিশাল আন্দোলনকে দমন করে সরকার ভেবেছিল হেফাজত সরকারে বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে পুনরায় দাঁড়াতে পারবে না । তবে হেফাজতে ইসলাম সরকারী মন্ত্রীদের ভাষন অনুযায়ী লেজগুটিয়ে বসে থাকে নি । তারা আবারও একতাবদ্ধ হয়ে ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে । প্রথম আন্দোলনের বিজয়ের সোপান রচনাকারী দলের দীর্ঘ ৯ মাস ২০ দিন পরের আন্দোলনে তাদের কি পরিনতি হবে বা সরকারের কোন অবস্থার মুখোমূখি হবে সেটা ২৪ ঘন্টা পরেই জানা যাবে । তবে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর দলের মত আল্লাম শফী সাহেবের দল বিজয়ের হাসি হাসতে পারুক বা না পারুক তারা হেফাজতের উত্থানে চিন্তিত হয়ে পড়েছে সেটা নির্ধিদ্বায় বলা যায় । সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা জানিয়েছেন ২৪শে ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া হবে না । সরকারের কথা রাখতে ডি এম পি হেফাজতে ইসলামকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেয় নি । গতকাল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর এবং ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবকে র্যাব সদস্যরা আটক করে হেফাজতে ইসলামের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে । অবশ্য র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কাসেমী সাহেবকে গেফতার করা হয়নি । কিছু তথ্য জানার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে । র্যাব তাদের কথানুযায়ী কাসেমী সাহবকে ছেড়েও দিয়েছে । অপরদিকে আল্লামা শফী সাহেব জানিয়েছেন সরকার যদি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করে তবে হেফাজতে ইসলামের রক্তের বিনিময়ে হলেও সমাবেশ সফল করা হবে । পাল্টা-পাল্টি বক্তৃতার কারনে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু হয়েছে । জয় পরাজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে । আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মত শফী সাহেবের নিয়তি হলে জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন অনেকটা নিশ্চিত ।  

লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক ।
সরকারী বি এম কলেজ , বরিশাল ।